ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে দীর্ঘদিনের একটি জমি নিয়ে কয়েকদফা আদালতের রায়ের পরও নতুন করে দখলের অভিযোগ উঠেছে। এতে এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। দু’পক্ষের উত্তেজনা থামাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে থানা পুলিশ ও সেনা সদস্যের একটি দল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের ৩ একর ৪৫ শতক জমি ১৯৩৪ সাল থেকে ভোগদখলে আছেন ইয়াকুব আলী খানের সন্তান আব্দুল গফুর খান ও আব্দুল হেকিম খান। জমিটির মালিক হিসেবে আরএস, বিআরএস খতিয়ানে আব্দুল গফুর খান ও আব্দুল হেকিম খানের নাম রয়েছে।
বর্তমানে জমিটি ভোগ করছেন গফুর খানের সন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন, জেবুন্নেসা খানম, কামরুন্নেসা খানম ও মমিনুননেসা খানম। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জমি নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকলেও ১৯৬৬ সালে আব্দুল মজিদ জমির মালিকানা দাবি করে দখলে নেন। এ নিয়ে ময়মনসিংহ যুগ্ম আদালতে মামলা হলে ১৯৬৮ সালে আদালত রায়ে জমি ফেরত দেন আব্দুল গফুর খানকে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে আবারো মজিদ পক্ষ দখল নেয় এবং সত্ত্বের মামলা করে। ১৯৮৭ সালে সেই মামলাতেও গফুর খানের পক্ষেই রায় হয় এবং ১৯৮৮ সালে ডিগ্রির মাধ্যমে পুলিশ জমি বুঝিয়ে দেয়।
পরে ২০০৭ সালে মজিদের ছোট ভাই নুরুল ইসলাম খান নতুন করে মামলা করলেও ২০০৯ সালে আদালত আবারও গফুর খানের পক্ষেই রায় দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৯ জুলাই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে গফুর খানের পরিবারকেই জমির মালিক ও ভোগদখলকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু ২৪আগস্ট (রবিবার) সকালে নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মাহমুদুল হাসান খান বিপিনের নেতৃত্বে একদল লোক জোরপূর্বক জমিতে ঘর নির্মাণ করে দখল নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পৈত্রিক সূত্রে ১৯৩৪ সাল থেকে পরম্পরায় জমিটি আমরা ভোগদখলে আছি।
ওরা বার বার জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এমনকি কয়েক দফা আদালতে মামলাও করে রায় তাদের পক্ষে নিতে পারেনি। আমাদের নামে বারবার আদালতের রায় হওয়া সত্ত্বেও নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মাহমুদুল হাসান খান বিপিন গং স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জোর করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগের বিষয়ে মাহমুদুল হাসান খান বিপিন জানান, জমিটির সিএস এ আমাদের বাপদাদার নাম রয়েছে।
গত রাতে থানায় আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করায় পুলিশ রাতে এসে আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে জমিতে যেতে নিষেধ করে। সকালে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে ওই জমিতে একটি ঘর নির্মাণ করি। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের এই বিরোধে আদালতের একাধিক রায় গফুর খানের পরিবারের পক্ষে হলেও প্রতিপক্ষ বারবার দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে। এতে এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
উচাখিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাসান খান সেলিম বলেন, গত ১৯ জুলাই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে একটি সালিশী বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে গণ্যমান্য লোকজন উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে গফুর খানের পক্ষেই রায় দেন। একটা পক্ষ সালিশ আদালত কিছুই মানছেন না।
পুলিশ ও সেনা সদ্যস্যের টিম ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ৪সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের গৌরিপুর সেনা ক্যাম্পে ডেকেছেন। ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।