নিজস্ব প্রতিবদেক: নেত্রকোনায় জহিরুল ইসলাম (৩৩) নামে এক যুবককে আটকে রেখে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ দেওয়ার পরও তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগেত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলার সদর উপজেলার রঙ্গের বাজার এলাকা থেকে জহিরুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ এবং গত বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
নিহত জহিরুল জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটী ইউনিয়নের দক্ষিণ কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত আরজ আলী খানের ছেলে।
জহিরুল একসময় কিশোরগঞ্জে একটি ইট ভাটায় কাজ করতেন। তবে ২-৩ মাস যাবত এলাকায় বসবাস করেন।
এদিকে জহিরুলের লাশ উদ্ধার হয়েছে সদর থানা এলাকা থেকে। তার বাড়ি কলমাকান্দা থানায়। আর তাকে আটকে রেখে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুর থানা এলাকায়। সেকারণে এ ঘটনায় তিন থানার পুলিশ বিপাকে পড়েছে। মামলা কোন থানায় হবে এটা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল যেহেতু দুর্গাপুর থানা এলাকায় তাই সেখানেই মামলা হওয়ার কথা। তবে বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, দুর্গাপুর এলাকায় কয়েকজনের সাথে মিলে জুয়া খেলতো জহিরুল। জুয়া খেলা সংক্রান্ত বিরোধে তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে- মুক্তিপণ দিতে দেরি করায় জহিরুলকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। এতে জহিরুল অসুস্থ হয়ে যায়। পরে হয়তো কোন গাড়িতে তুলে জেলা সদরে পাঠানো হচ্ছিল। পথে রঙ্গের রাজারে জহিরুলের মৃত্যু হলে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হবে।
নিহত জহিরুলের চাচাতো ভাই কৈলাটী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন খান বলেন, গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জহিরুল। রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে আমাদের জানায় যে, জহিরুল তাদের হাতে আটক আছে। তাকে জীবিত ফেরত চাইলে ৬০ হাজার টাকা দিতে হবে। এক টাকা কম দিলেও হবে না। অন্যথায় জহিরুলকে মেরে ফেলা হবে। জহিরুলের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে দ্রুত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। নানা জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করতে সময় লেগে যায়।
এদিকে দুর্বৃত্তরা মোবাইলফোনে হুমকি দিয়েই যাচ্ছিল। পরে শুক্রবার দুপুরে তাদের দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বারে ৬০ হাজার পাঠানো হয়। টাকা পাঠানোর পর কল দেওয়া হলেও অপর প্রান্ত থেকে কেউ আর কল রিসিভ করেনি। সন্ধ্যায় খবর পাই- সদরের রঙ্গের বাজারে জহিরুলের লাশ পাওয়া গেছে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় দুর্বৃত্তরা নির্যাতন করে জহিরুলকে হত্যা করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও এর যথাযথ বিচার চান তিনি।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, জহিরুলের লাশ সদর থানা এলাকায় পাওয়া গেলেও এর ঘটনাস্থল দুর্গাপুরে। আর তার বাড়ি কলমাকান্দায়। মুক্তিপণের জন্য আটক রেখে নির্যাতনে অসুস্থ হওয়ার পর হয়তো তাকে সদরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছিল। মারা যাওয়ায় ফেলে রেখে চলে গেছে। লাশ কলমাকান্দা থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। বাদীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হবে।