জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে ২৪-২৫ সেশনের নবীন শিক্ষার্থীদের উপর র্যাগিং এবং অমানবিক নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ করা থেকে ঠেকানোর অভিযোগ উঠেছে একই ইন্সটিটিউটের ২৩-২৪ সেশনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ও অভিযুক্তদের মদদদাতা শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীরা হলেন; পিয়ুস সাহা, প্রকাশ বিশ্বাস, মো. সাজ্জাদ, রিফাত হোসাইন, মো. শিহাব, কাজি ফারজানা জারিন অদ্রি, পুষ্পিতা লোদ, অন্নপূর্ণা দত্ত, তানজিলা মিতু ও মো. ফাহাদ ইসলাম। জানা যায়, গত ৩০ জুলাই (বুধবার) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে জুলফা ভবনের শ্রেণিকক্ষে ঘটে এই র্যাগিং এর ঘটনা।
একদিন নয় বরং ক্রমাগত র্যাগিং ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এক লিখিত অভিযোগে তারা জানান, ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক দিনে ৩-৪ বার ক্লাসে গিয়ে তাদের হয়রানি করতো। কথা না শুনলে ব্যাচকে বয়কট করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাদের টানা ২০-৩০, কখনো ৪০ মিনিট পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং কথামতো আচরণ করতে ব্যর্থ হলে চড়-থাপ্পড় মারতে উদ্যত হয়েছেন। মানবিক মর্যাদা ও আত্মসম্মান উপেক্ষা করে ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ‘তুই/তুকারি’ সম্বোধন করা হয়েছে। জোরপূর্বক সিনিয়রদের নাম-পরিচয় জানতে বাধ্য করা হয়েছে।
এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে বা অভিযোগ দিলে ডিপার্টমেন্টের সুনাম নষ্ট হবে বলে বুঝিয়ে ভুক্তভোগীদের চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাতে জানা যায়, র্যাগিং ও মানসিক নির্যাতনের ফলে ২৪-২৫ সেশনের ফাতেমা আক্তার নিশা নামে এক নবীন শিক্ষার্থী প্যানিক এট্যাকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, “আমাদের কাওকে অসুস্থ সহপাঠীর সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এইসব ঘটনা ঘটার পর ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করতে দেয়া হয়নি। আমাদের বলা হয়েছে এটা করলে ইন্সটিটিউটের সম্মান নষ্ট হবে। কিন্তু আমরা যে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি তার কোন সুষ্ঠু সমাধান পাইনি।” আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা জানতামনা এধরণের ঘটনা ঘটলে আসলে কি করা উচিত। আমাদের সহপাঠী জ্ঞান হারানোর পর ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীরা যারা এর সাথে জরিত তারা ভয় পেয়ে যায় এবং বিষয়টা নিয়ে সিনিয়রদের স্মরণাপন্য হোন। তারা র্যাগিং অভিযোগ না দিতে উৎসাহিত করেন এবং নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে বলেন। কিন্তু আমরা এর পরেও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এবং র্যাগিংয়ের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত পিয়ুস সাহাকে প্রশ্ন করলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং কোন উত্তর না দিয়ে কল কেটে দেন। এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী প্রকাশ বিশ্বাসকে প্রশ্ন করলে তিনি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন এবং সাংবাদিককে বলেন, “যা পারেন করেন।” এ বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে সাংবাদিকতা পেশা সংশ্লিষ্ট পদ ও পরিচয়ের বাইরেও ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চান।
এবং অপর একজন সাংবাদিক তাকে র্যাগিং এর বিষয়ে প্রশ্ন করায় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হেনস্তার অভিযোগ তুলেন এবং কল কেটে দেন। সাংবাদিকের উপর আনিত অভিযোগের বিষয়ে বিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমকে জানালে তিনি বলেন, “র্যাগিংয়ের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি কিন্তু সাংবাদিকদের সম্পর্কিত এই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আমি দ্রুতই এ বিষয়টি সুষ্ঠ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”