নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হলো ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’। সবুজায়নের ধারাবাহিক প্রয়াসের অংশ হিসেবে এদিন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রোপণ করা হয় প্রায় ৫০ প্রজাতির ১৫৪০টি বৃক্ষচারা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের লেকপাড়ে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজায়নের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাঁদের হাতে রোপিত ছোট্ট চারাটি কেবল একটি গাছের সূচনা নয়- তা বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃহৎ, দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই স্বপ্ন। এ স্বপ্ন এমন একটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলার, যা পরিবেশবান্ধব, নান্দনিক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সবুজ ক্যাম্পাসের যে-পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই ধারণ করে এসেছে, এ দিনের কর্মসূচি তার বাস্তবায়নের পথে একটি সুসংগঠিত পদক্ষেপ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ বন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। যাঁরা সকলেই ছিলেন এই সবুজ আন্দোলনের অংশীদার। প্রত্যেকে যেন মাটির গভীরে পুঁতে দিয়েছেন একটি করে আশাবাদের বীজ।
রোপিত গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হলো- নাগলিঙ্গম, নাগেশ্বর, পাদুয়াক, গামারি, তেলসুর, কাঠ বাদাম, বক্স বাদাম, সিভিট, বুদ্ধ নারিকেল, চিকরাশি, তমাল প্রভৃতি। এসব গাছের অনেকগুলোই পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ, কিছু ঔষধি, আবার কিছু বিরল প্রজাতিও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রোপণ করা হয়েছে।
একইদিন বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম।
বৃক্ষ রোপণের সময় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, ‘নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের সুপরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
আহবায়ক হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ একরের খালি জমিকে সবুজে রূপান্তরের স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগিয়েছি। আজ বন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় ১৫০০-এরও বেশি গাছ রোপণ করতে পেরেছি। এই কর্মসূচি চলমান থাকবে, যতদিন না আমাদের ক্যাম্পাস একটি পরিপূর্ণ সবুজ পরিসরে পরিণত হয়।’ ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ‘আমরা চাই একটি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগিয়ে একটি নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব সবুজ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে। আজকের কর্মসূচি তেমনই এক সমন্বিত প্রয়াসের ফল।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই পরিবেশ গঠনে সহায়ক হবে না। বরং এটি একটি সবুজ আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা জাগিয়ে তুলবে।