ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এই বার্তা তুলে ধরেন।
ছাত্র নেতারা জানান, যারা স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনকে জঙ্গি কার্যক্রম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের পক্ষে ছিল তাদের সঙ্গে কোনো আপোষ করা চলবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্র নেতারা।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বড় ভিকটিম হচ্ছেন আমাদের ওয়ালিউল্লাহ আর আল মুকাদ্দাস ভাই। প্রায় একযুগ আগে তাদেরকে গুম করা হলেও আজও তাদের কোন খোঁজ মেলেনি। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক সংগঠন, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ভূমিকা পালন করেছে। সবার কথা বলার অধিকার আছে। সবাইকে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। স্বৈরাচার মুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সকল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে একযোগে কাজ করব। আমাদের দাবি, শহীদদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ছাত্রদলের ইবি শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজকে আপনাদের নির্দেশনা দিতে হবে আপনারা স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন। আপনাদের তো বোঝা উচিত ছিল শেখ হাসিনা যদি টিকে থাকত আপনাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হত। আপনারা কেন এখনও স্বৈচারারের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আপনাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে। আমরা আগামী এক সপ্তাহের সময় দিচ্ছি। আপনারা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবেন। অন্যথায় আপনাদের লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য হব। এই ছাত্র-জনতা আপনাদেরকে লাল কার্ড দেখাবে। আমরা আশা করবো প্রশাসন অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারা আছেন। স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারে আপনাদের কি কোনো দায় নেই? আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, জুলাই বিপ্লব এবং শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী আপনারা ক্যাম্পাস পরিচালনা করুন। জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে যদি ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে না পারেন তাহলে চেয়ার ছেড়ে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ছাত্রজনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে কটুক্তি করে যারা স্বৈরাচারের পক্ষ অবস্থান নিয়েছিল তাদেরকে বিচার করতে হবে। যারা গণহত্যার পক্ষে ছিল তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন আপোষ নেই। আপনারা একই ভবনে থাকবেন, একসাথে ঘুমাবেন আর আর ঠেলে দিবেন ছাত্রদের দিকে, আপনারা কি ফিডার খান? আপনারা এত নিয়মের অজুহাত দেখাবেন না। নিয়ম মেনে জুলাই বিপ্লব হয়নি। জুলাই স্প্রিরিটের বাইরে গিয়ে যদি কোন কার্যক্রম করা হয় আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো।’
এছাড়াও ছাত্রসংগঠনের পক্ষে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নুর আলম ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফতে ছাত্র মজলিশ ইবি শাখার সভাপতি। এসময় অতি দ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছেন তার সাথে আমরা একমত। আজ যদি ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সফল না হতো, তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারতাম না। চব্বিশের ৪ আগস্ট আমাদের বিপক্ষে গিয়ে যারা আর নয় হেলাফেলা এবার হবে ফাইনাল খেলা স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা জুলাইয়ের মতো ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে আবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’
জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসন ভবন থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, হল, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। র্যালি শেষে ক্যাম্পাসের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আলোচনা সভা শুরু হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এসময় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষক-কর্মকর্তারা এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্টদেরকে চিহ্নিত করার জন্য কমিটি করা হয়েছিল। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার নির্দেশ দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল তোমরা দেখতে পাবে। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাসিস্টদের অপসারণ করা হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও ফ্যাসিস্ট শক্তির অপসারণ অবশ্যই হবে।’