দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

এনামূল হক পলাশ: ৫ তারিখ বুঝতে পারলাম আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী আর গণহত্যার ভয়ে মানুষ ঘরে বন্দী থাকলেও তাদের সমর্থন ছিল ছাত্রদের পক্ষে। এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হলো নেত্রকোণা শহরের মানুষ। লাখো জনতা নেমে পড়েছে রাস্তায়। এতো মানুষ, এতো চেনা অচেনা মানুষ একত্রে আমি কখনো দেখিনি। সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে যেন বিজয় উদযাপন করছে।

প্রথমেই আমার মনে হলো এই দৃশ্য যদি আমার স্ত্রী সন্তানকে না দেখাই তাহলে জীবনের এই মহান দৃশ্য দেখা থেকে তারা বঞ্চিত হবে। মোটর সাইকেলে আমরা বের হলাম। বাতাসে মুক্তির স্বাদ। রাস্তায় মানুষের ঢল। আওয়ামী লীগ অফিসে কারা যেন আগুন দিয়েছে। থানার সামনে অনেক লোক পাহাড়ায় যুক্ত হয়েছে যেন কেউ থানা আক্রমণ করতে না পারে। প্রশাসনের সকল অফিসার আত্মগোপনে চলে গেছেন। আমাদের ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে বললাম, “বাবা, এখান থেকে শিক্ষা নিও। কখনো মানুষের ঘৃণা অর্জন করবে না, জুলুম করবে না। জালিমের কি পরিণতি হয় তা দেখানোর জন্য তোমাকে নিয়ে বের হয়েছি।”

আমাদের ছেলে ইতিপূর্বে আমাকে গোপন করে কোটা বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে গিয়েছিল সেই ১৭ তারিখেই। আমি নেত্রকোণা শহরে চলে এসেছিলাম কর্মস্থল ত্যাগ করে। সেদিনই আমি হাসিনার পতনের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। সরকার পতনের অনিবার্যতা আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছিল এবং আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মাঠে ছিলাম। আমার সাথে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিল সায়েম, তানভীর, নাদিমের নেতৃত্বে সংগঠিত ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ। নিয়মিত যোগাযোগ চলছিলো ঢাকায় কবি পলিয়ার ওয়াহিদ আর কবি অনার্য শান্তর সাথে। ঘন্টার পর পর ঘন্টা আলোচনা হচ্ছিল চিন্তক অনুপ সাদীর সাথে। মাঝে মাঝে চিন্তক আনোয়ার স্যারের সাথে কথা হচ্ছিলো। আমি, চিন্তক অনুপ সাদি, চিন্তক আনোয়ার হাসান প্রতিদিন ভাবতাম হাসিনা কবে যাবে। আমরা মনে করেছিলাম হাসিনাকে বিদায় করতে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রয়োজন হতে পারে। আমি ছাত্র ইউনিয়নকে সর্বাত্মক সহায়তা ও মানসিক শক্তি যোগাচ্ছিলাম। সারা শহর নিরব অথচ উত্তেজনায় টান টান। শহরের অধিকাংশ মানুষ মনে মনে হাসিনাকে পরিত্যাগ করে। হাসিনা বিরোধী চাপা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বুঝা যাচ্ছিলো, যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা গোপনে আমার সাথে উত্তরা হোটেলের সাথে একটি মার্কেটের একটি রুমে দেখা করত। এর মধ্যে পলিয়ার ঢাকা থেকে ৪ আগস্ট আমাকে জানালো, হাসিনা সম্ভবত পলায়ন করেছে। ফোন পেয়ে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল হাসিনা পলায়ন করেছে। আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেদের সুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে বলি। সেই সময়গুলোতে আমার আড্ডার অধিকাংশ বন্ধুরা আমাকে পাগল হয়ে গেছি মনে করতে থাকল। এমন পরিস্থিতিতে চলে আসল ৫ আগস্ট বা ৩৬ জুলাই।

স্ত্রী আর ছেলেকে বাসায় রেখে আসার পথে মোক্তারপাড়া এলাকায় একজন মা কে পেলাম তার দুই কন্যা সন্তান নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। তাকে বলতে শুনলাম, “আল্লাহর রহমতে ফেরাউনের পতন হয়েছে। আমরা মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পারতেসি।”

তাদেরকে বাসায় রেখে আবার রাস্তায় নামলাম। শহরের আগুন থামাতে হবে। ইতিমধ্যে নাজু ভাইদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অফিসের আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। কারণ এই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে বড়বাজার ও ছোটবাজারের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বড় বাজারের লোকজন সংগঠিত হয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে। মোক্তারপাড়ার গলিতে গলিতে টহল চলছে যেন কেউ ভাংচুর করতে না পারে। তারপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা কেউ কেউ ঘটিয়েছে পূর্ব শত্রুতার জেরে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

তারপর থেকে আমাদের মাথায় এসেছে, যে কোন মূল্যের বিনিময়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সকলের সম্মিলিতভাবে মাঠে থাকতে হবে। বিএনপি, হেফাজত, জামায়াত, প্রগতিশীল দলমত নির্বিশেষে এই কাজটি করে গেছেন অভ্যুত্থানের পরবর্তী আরও কমপক্ষে এক সপ্তাহ। তখন এদেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version