ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) ছাত্র-শিক্ষক সংহতি দিবস উপলক্ষে জুলাই শহিদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ মুলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার ১৭ টি শহীদ পরিবারের মাঝে উপহার প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ জন আটক শিক্ষার্থীদেরকে সংবর্ধনা স্মারক দেওয়া হয়।
রবিবার(৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে এই আয়োজন করে জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক- কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক,সহ-সমন্বয়ক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ রাকিবুল হোসেনের বাবা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হোসেন ১৯শে জুলাই মিরপুর ১০ নাম্বারে গোলচত্বরের ওখানে গুলিবিদ্ধ হয় এবং ১০ থেকে ১২ মিনিটের ভিতরেই আমার সন্তান মারা যায়। পাশে আজমল হাসপাতাল, ওখানে নিয়ে যাওয়ার পরেই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।ছেলের সেই স্মৃতি, রক্তমাখা সেই মুখ, বুক, মাথা এখনও ভুলতে পারি না। ছেলের বিভিন্ন স্মৃতি বারবার মনে আসে। । প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি করে দিন কেটে কেটে আজ এক বছর পনেরো দিন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শহীদের অভিভাবকদের এখানে জমায়েত করার জন্য উনারা গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে আমাদের শহীদদের স্মরণ রাখার জন্য এইভাবে যদি বছরে কমপক্ষে একটা অনুষ্ঠানও করা হয়, তবুও আমরা সন্তুষ্ট থাকবো।’
ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন “বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান আপনারা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়েন। তা না হলে শহীদের রক্ত ঋণ শোধ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জনতার আকাঙ্ক্ষা, জনতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন যদি তাদেরকে পূরণ করতে হয়, তাহলে জনগণের দাবির পাশাপাশি তাদেরকেও ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর বিপ্লব সাধনের পরে সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার সময়স্বাপেক্ষ, সকলের ঐকমত্যে সংস্কার জরুরি।নতুন বাংলাদেশ গড়তে যেন আমরা জুলাইয়ের স্পিরিটকে ভুলে না যাই। তাহলে কিন্তু আবার সেই ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আপনারা সবাই জাগ্রত থাকবেন। ষড়যন্ত্র আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমাদেরকে কঠিন শপথ নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগন্তক সমাজকে বলবো, এই শহীদ পরিবারকে আগামী দিন স্মরণ রাখতে। এই শহীদ পরিবারকে যেন আমরা ভুলে না যাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, আমরা পরিবর্তন করেছি। শহীদদের নামে নামাঙ্কিত হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সামনের যে স্থাপনাগুলো, সেই স্থাপনাগুলোও ছাত্র শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে শহীদদের নামেই নামাঙ্কিত হবে। ইসলামী যারা বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, যারা রক্ত দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার জন্যে, তাদের নামে নামাঙ্কিত হবে। আমরা যারা বেঁচে আছি, যারা আমাদের বাঁচার জন্য সহযোগিতা করেছে আজীবন তাদের জন্য দোয়া করব। আমরা যাতে শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারি, আল্লাহর কাছে এই তৌফিক কামনা করছি।’