এনামূল হক পলাশ: ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর পরই আমরা বলেছিলাম বাংলা একাডেমি ঘেরাও করে কর্তৃত্ববাদের দোসরদের অপসারণ করতে। আমাদের সহযোদ্ধাদের অনেকেই তখন বলতেছিলেন, যেহেতু সেখানে অনেকের রুটি রুজির বিষয় আছে সেহেতু এতো কঠোর অবস্থান নেওয়া আমাদের ঠিক হবে না। তাদের সেই যুক্তিকে মেনে নিয়ে আমরা আর অগ্রসর হয়নি। পরবর্তীতে সরকার এখানে কিছু লোকজন পুনর্বাসন করেছেন। আমরা ভেবেছিলাম এরা আমাদেরই লোক। নিজের যেহেতু চাহিদা নেই কেউ না কেউ তো দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা কি তখন ভুল করেছিলাম?
অভ্যুত্থানের এক বছর পর এই প্রশ্নটা সামনে এসেছে। প্রতিরোধের সাংস্কৃতিক লড়াইকে এরা রীতিমতো অস্বীকার করছে। অথচ, কথা ছিলো এরা একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করবে।
সম্প্রতি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা সংকলন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা’। সংকলনের প্রধান সম্পাদক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। সংকলনটি সম্পাদনা করেছেন কবি রওশন আরা মুক্তা এবং হাসান রোবায়েত নামের দুইজন অভ্যুত্থানপন্থী কবি। দেশের অভ্যুত্থানপন্থী অনেক কবি সাহিত্যিকের মধ্য থেকে এই দুইজনকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
এই সংকলন নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। প্রকাশিত হওয়ার পর সূচিপত্র দেখে অভ্যুত্থানপন্থী অনেক কবি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে পোস্ট করে কবিরা তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ আজম এবং হাসান রোবায়েত ও রওশন আরা মুক্তার সম্পাদনায় প্রকাশিত সংকলনটিতে স্বৈরাচারের দোসরদের যুক্ত করা হয়েছে বলে সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন। সূচিতে থাকা গুটিকয়েক লেখক বাদে অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত অথবা সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল এমন লেখকও এই সংকলনে স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
লেখক ও পাঠক মহল আরো অভিযোগ করছে, বাংলা একাডেমির মতো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে মানের সংকলন প্রকাশ করেছে তাতে উপেক্ষা করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের মূলধারার কবিদের। একাডেমির মহাপরিচালক এবং সংকলনের সম্পাদকরা এই দায় এড়াতে পারেন না।
এর মধ্যে বাংলা একাডেমি তার পেজ থেকে সংকলনের সূচীপত্র সরিয়ে নিয়েছে। তারপর একজন সম্পাদক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, “যে কবিতা— কবিতা হয়ে উঠেছে সেগুলোই সংকলনে স্থান পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেছেন যে, “প্রচ্ছদ সংক্রান্ত জটিলতায় বইটির বিক্রয় আপাতত বন্ধ আছে, তাই বাংলা একাডেমি ফেসবুক থেকে তাদের প্রাপ্তিস্থানের পোস্ট সরিয়ে দিয়েছে। প্রচ্ছদ আবার ছাপা হয়ে আসা মাত্রই বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রে বইটি পাওয়া যাবে, অতি শীঘ্রই।”
তার এই পোস্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি যথেষ্ট বেয়াদবির সাথে এদেশের সকল বৈষম্য বিরোধী কবি লেখকদের অবজ্ঞা করেছেন। কবি লেখকদের প্রতি তার উদ্ধত আচরণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তাদের এই কাজ পূর্ব পরিকল্পিত। এমন উদ্ধত বক্তব্য এদেশের কোন কবি সাহিত্যিক সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলে সম্পাদকদ্বয়কে অপসারণ করে নতুনভাবে সংকলনটি প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে।