ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবনের পাশে পদ্ম গোখরা, খৈয়া গোখরা ও কালাচ সাপ দেখা গেছে। এ যেন সাপের কোলে ১৭৫ একর ক্যাম্পাস। এছাড়া সর্পদংশিত কাউকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের নেই কোনো সুযোগ চিকিৎসা কেন্দ্রে। এতে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের সময় সাপ ছায়া, অন্ধকার, আর্দ্রতা ও খাবার খোঁজে। সাপ নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য আর্দ্র পরিবেশ খোঁজে। সেজন্য অনেক সময় তারা মানুষের ঘরের আশপাশে চলে আসতে পারে। সাপ খোলামেলা জায়গায় এবং উন্মুক্ত অবস্থানে থাকতে খুবই অপছন্দ করে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, সড়কের আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন না থাকায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। বিশেষ করে লালন শাহ হল, সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হলসহ এর আশপাশ, একাডেমিক ভবনসহ জিমনেসিয়ামের আশপাশে প্রায়ই বিভিন্ন বিষাক্ত সাপ দেখা যায়। এতে রাতে চলাফেরায় ও হলে থাকতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় সাপ দেখা যাচ্ছে। আবাসিক হল এলাকায় এমন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এমনকি কাউকে যদি বিষাক্ত সাপ দংশন করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পাওয়ার উপায় নেই। আর কালাচ সাপ দংশন করলে সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না, চিকিৎসা না পেলে চার ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। এটা খুব ভয়াবহ একটা ব্যাপার। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লালল শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, ইবির লালন শাহ হল যেন সাপের কারখানা। সাপ আতংকে ঘুমাতে পারছে না কেউ। গত সপ্তাহ খানেক আগে দুই দিনে ১৭ টির মতো সাপ মারা হয়েছে। গতকাল রাত ১২ টার পর মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৩টি সাপ মারা হয়েছে। আবার তৃতীয় তলায়ও একটা সাপ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ সাপের দংশনে মারা গেলে তার লাশ টা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফেলে রাখলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে।
ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাফওয়ান রহমান বলেন, ‘সাধারণত বড় সাপ ডিম দেয়ার পর চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছোট সাপই বিপজ্জনক। কিছুদিন আগে লালন শাহ হলের ফাঁকা যায়গা থেকে আমরা সাপ বের করেছি, এরকম আরও কিছু আছে। আমার সাথে আজকেও প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা হয়েছে। লালন শাহ হলের জন্য সমাধান মনে হচ্ছে ফাঁকা জায়গা গুলো সীল করে দেয়া।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেডিকেল একটা প্রাইমারি সেন্টার বলতে গেলে সর্পদংশিত কেউ এখানে এলে আমরা তাকে স্যালাইন, ক্যানলাসহ সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, এখানে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সুযোগ নেই। কারণ এটি দেওয়ার কিছু পরিবেশ আছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া এটি দেওয়া সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। একজনকে সাপ দংশন করলেই অ্যান্টিভেনম দেওয়া যাবে না, বিষাক্ত সাপের দংশন ছাড়া এটি দেওয়া হলে রোগী মারাও যেতে পারে। কার্ডিয়াক সাপোর্টসহ বিভিন্ন টেস্ট শেষে অ্যান্টিভেনম ইউজ করতে হয়।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, ১০ বছর আগে থেকেই আমাদের কিছু অ্যান্টিভেনম আছে। যেগুলোর একটি বাদে বাকি ১০-১২টার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার টাকা। এখানে এন্টি-ভেনম দেওয়ার স্কোপ নেই, তাই আমরাও নতুন করে আর নিয়ে আসিনি।
লালন শাহ হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান খান বলেন, সাপের উপদ্রব আমাদের সকলের জন্য উদ্বিগ্নের বিষয়।শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে। সাপ যাতে রুমে না ঢুকে সেজন্য প্রায় দুই সপ্তাহ আগে কার্বলিক এসিড ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এটি কতটুকু কার্যকরী তা আসলে দেখার বিষয়। হলের ড্রেনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার ও হলের পিছনের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সাপ উদ্ধারে ও সমস্যা সমাধানে রেস্কিউ টিমের সাথে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমার হলের দুই বিল্ডিং এর ফোকর অংশ বালি সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চিকিৎসা কেন্দ্রে জানিয়েছি কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত যেন থাকে। কেননা আগে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করতে হবে। এছাড়া প্রশাসনকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে।
এস্টেট অফিস প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।পরিষ্কারের কাজ দ্রুত করার জন্য নতুন আরও কিছু মেশিন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রশাসন সহায়তা করলে আমরা আগাছা নির্মূল করে ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবো।’