পবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) আবারও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শ্রমিকের নাম তানজিল (২০)। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে শিক্ষক ডরমিটরি ভবনে কাজ করার সময় তিনি পড়ে যান। এক মাসের ব্যবধানে এটি দ্বিতীয় শ্রমিক মৃত্যু।
গত এক বছরে প্রাণ গেছে তিনজনের। কিন্তু তারপরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। নির্মাণস্থলে শ্রমিকদের কোনো সেফটি গিয়ার দেওয়া হচ্ছে না। শিশু শ্রমিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো, মাদক সেবন ও মারামারির মতো ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন চুপ। প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বারবার দায় চাপাচ্ছেন ঠিকাদারের ওপর। নিহতের পরিবারকে সামান্য টাকা দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা, মামলা না করতে চাপ—এসব যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এই বিষয় নিয়ে আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নুরুন্নবী সোহান বলেন, পবিপ্রবিতে একের পর এক শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। সেফটি ব্যবস্থার অভাবে জীবন ঝুঁকিতে কাজ করছেন শ্রমজীবীরা।
অথচ সরকারি গেজেট অনুযায়ী জুলাই বিপ্লবে শহীদ ৮৪৪ জনের মধ্যে ২৮৪ জনই ছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। এই অবদান সত্ত্বেও তাদের প্রতি অবহেলা নির্মম ও অমানবিক। তাদের অধিকারের কথা বা ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি কেউ তোলে না। অবিলম্বে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। অপর এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিবার কেউ মারা যায়, কিছু টাকা দেওয়া হয়, তারপর সব আগের মতো চলতে থাকে। এটা কি কোনো সমাধান?” ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঠিকাদার আমীর বিল্ডার্স-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. দোয়েল হক বলেন,“শ্রমিকেরা তো বাড়ি থেকে মাদক নিয়ে আসে না। তারা এখান থেকেই কোথাও না কোথাও থেকে তা সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সার্বক্ষণিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”
প্রকৌশল বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস শরীফ বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে আমরা বারবার বলেছি।” প্রকল্প পরিচালক মো. ওবায়দুল ইসলাম জানান, “নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এ বিষয় বলেন, “আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছি, এবং আমাদের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) এ বিষয়ে কাজ করছেন।
পূর্বেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।” কেন পূর্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” আমরা চাইলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কিছু করতে পারি না, এটা আমাদের আইনের মধ্যে নেই। ” শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানে না—এটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতি বা দুর্বলতা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা আমাদের বিষয় নয়, এটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।”