নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মঞ্জুরা আক্তারের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের ১১জন সদস্য ওই ইউপি মহিলা সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) পরিষদের এক বিশেষ সভায় এই অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। অভিযুক্ত মঞ্জুরা আক্তার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগে উল্লেখ, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি অন্তত পাঁচটি প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোর কোনো কাজই বাস্তবায়ন হয়নি। আবার কিছু প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে পুরো অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
তাছাড়া আরো উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলো হলো- ২০২১-২০২২ অর্থবছরে টিআর বরাদ্দের আওতায় সাবমার্জিবল পাম্প স্থাপন, আসবাবপত্র ক্রয় ও রংকরণ বাবদ দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টিআর (২য় পর্যায়) বরাদ্দে ৭১ হাজার ৮৩৭ টাকা ব্যয়ে ইউড্রেন নির্মাণ প্রকল্পেও কোনো কাজ হয়নি। প্রকল্পটি অন্য বরাদ্দে বাস্তবায়ন হয়।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কাবিখা বরাদ্দে রাস্তা সংস্কারের প্রকল্পে অপ্রতুল কাজ করে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। একই অর্থবছরের আরও দুটি প্রকল্পে (রাস্তামেরামত) মোট এক লাখ চার হাজার টাকা বিল উত্তোলন করলেও কোনো বাস্তব কাজের চিহ্ন মেলেনি। ইজিপিপি বরাদ্দে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি রাস্তা মেরামতের কাজও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ ছিল।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মঞ্জুরা আক্তার দাবি করেন, আমি কোনো ভুয়া প্রকল্পে জড়িত নই। ইউপি সচিব আমাকে না জানিয়ে কাগজপত্রে সভাপতি বানিয়ে টাকা তুলেছেন। আমি এ বিষয়ে ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছি।
ইউপি প্রশাসক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে একাধিক প্রকল্পে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া তথ্য ফাঁস, পরিষদের সভায় বাইরের লোকজন আনা, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ইত্যাদি অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমি নিজেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পগুলো তদন্ত করেছি। একাধিক অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি। ইউপি সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাবটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে এবং দুর্নীতির অভিযোগে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনার পর গড়াডোবা ইউনিয়নসহ কেন্দুয়া উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে জনস্বার্থের অর্থ আত্মসাত করতে না পারে।