ইবি প্রতিনিধি:
অছাত্র, বিবাহিত, নিষ্ক্রিয় ও চাকরিজীবী দিয়ে চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি। তিন মাস মেয়াদী এ কমিটির মেয়াদ গত ১৬ জুন ৪ বছর পূর্ণ হয়। তবুও নতুন কমিটি পায়নি শাখাটি। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ায় পদবঞ্চিত ও তরুণ কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন সাংগঠনিক কার্যক্রমে।
এছাড়া শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বয়স নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। বিভিন্ন মহলে আদুভাই বা চাচ্চু বলে সম্বোধনও করা হচ্ছে তাদের। এ নিয়ে ছাত্রদলে পদপ্রত্যাশি ও দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিতরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা জানান, অনেকদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থীরা পদ ধরে আছেন। অনেকে বিবাহিত ও চাকরিজীবী। এতে সংগঠনের দুর্দিনের ত্যাগী ও সক্রিয় কর্মীরা পরিচয়হীনতায় ভুগছে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ জুন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের অনুমোদন দেন তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। তবে এ কমিটির অধিকাংশই অছাত্র, বিবাহিত এবং চাকরিজীবী। আবার কেউ থাকেন বিদেশে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতি করা সক্রিয় কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী রোকনুজ্জামান বলেন, ‘দুর্দিনে রাজনীতি করার পরও ওই কমিটিতে আমাকে পদ দেওয়া হয়নি। অনেক জুনিয়র আছে যারা মিছিল মিটিং না করেও পদ পেয়েছে। কিন্তু আমরা মিছিল, মিটিং সবকিছু করেও কোনো পদ পাইনি। তারপরে ওই কমিটিতে এমনও আছে যে ছয় সাত জনরে কেউই চেনেই না। সাহেদ ভাই, মিথুন ভাই থেকে শুরু করে কেউই চেনে না। আমি চাইব যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কমিটিকে গুরুত্ব দেবে।’
এ বিষয়ে ছাত্রদল কর্মী পুলক আহমেদ বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রদলের ফ্যাসিস্ট বিরোধী প্রতিটা আন্দোলনের সাথে ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্বে ছাত্রদলের কার্যক্রম চলছে। নতুন করে কমিটিও হয়নি। এর ফলে আমাদের মতো কর্মীদের নেই কোনো দলীয় পরিচয়। যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। আমরা আশাবাদী কেন্দ্রীয় ছাত্রদল অতি দ্রুত নতুন কমিটি অনুমোদন করবে। যার ফলে আমাদের পরিচয়হীনতার অবসান হবে।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘২০২১ সালের ১৬ই জুন কমিটি প্রকাশের একদিন পরেই আমি এই কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। সেদিন থেকেই আমি চাই যে নতুন করে কমিটি হোক। এই কমিটির সিংহভাগ নেতারা নিষ্ক্রিয় এবং ৫/৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কি না আমরা জানি না। তারা সম্পূর্ণ অপরিচিত। এছাড়াও এই কমিটি মেয়াদত্তীর্ণ ও অনেকেই বিবাহিত। আমাদের ত্যাগী কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে নেয়না। এছাড়াও আমি শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের সম্মুখীন হই। আমি মনে করি এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এবং আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমান অবগত আছেন। আমি বিশ্বাস করি দল খুব দ্রুত একটি সুন্দর কমিটি উপহার দেবে এবং যেখানে ত্যাগী কর্মীরা মূল্যায়িত হবে।’
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘রাজনৈতিক কিছু বিষয়ের জন্য, বিশেষকরে জামাত-শিবিরের গুপ্ত অপরাজনীতি চেপে বসার কারণে ক্যাম্পাসে অভিজ্ঞদের প্রয়োজন ছিল। তাই আমরা এতদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে ইবি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ত্যাগী তাদেরকে আমরা কমিটির আওতায় এনে শিগগিরই কমিটি দিব।’