জলঢাকা প্রতিনিধি:
রাস্তার পাশ থেকে অথবা খোলা মাঠ কিংবা ঝোপঝাড় থেকে শাক তুলে এনে বিক্রি করে ৯ সদস্যর সংসার চালান ৬২ বছরের বিধবা সুফিয়া বেগম। তার বাড়ী নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড পশ্চিম কালির ডাঙ্গায়। বিধবা সুফিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী মারা গিয়েছে প্রায় ২৬ বছর হলো। স্বামী মারা যাওয়ার পর রেখে যান দুই কন্যা সন্তান। দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও এর মধ্যে ছোট মেয়ে ও তার স্বামী হঠাৎ মারা যান।
ছোট মেয়ের ৩ টি সন্তান রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক বছর পর তার বড় মেয়ের স্বামী মারা গেলে বর্তমানে ৯ জন সদস্য নিয়ে সংসার চালাতে হয় তার। থাকার কোন নিজস্ব জায়গা জমি নেই। মানুষের জমিতে কোন রকম টিনের ছাবরি ঘর বানিয়ে থাকতে হয় তার। শুষ্ক মৌসুমে কোনরকম থাকতে পারলেও শীত ও বর্ষা মৌসুমে থাকতে খুবই কষ্ট হয়। এ জীবন যুদ্ধে সরকারের সহায়তা কামনা করেছে অসহায় এই বৃদ্ধা বিধবা সুফিয়া বেগম।
অভাবের তারনায় বাড়ির আশে-পাশে ও অন্যান্য জায়গা থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শাক নিয়ে আসেন। এরপর এগুলো আঁটি বেঁধে বাসা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা বাজারে আনেন বিক্রি করতে। তাছাড়া প্রতিদিন বাজারে বসা হয়না তার। যখন শাক জোগাড় করতে পারেন তখনই কেবল বসেন তিনি। এটা বিক্রি করে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মত আয় হয় তার। এ আয় দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয় তার। বাজার আসতে পারলে চুলা জ্বলে না পারলে উপস থাকতে হয় তাদের। ৬২ বছরের সুফিয়া ইচ্ছে হলেও বসে থাকতে পারেন না।
শরীর না চাইলেও এতিম বাচ্চাদের মুখে খাওয়া তুলে দিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন তিনি। সমাজের কেউ দায়িত্ব না নিলেও তাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করতে হয়। একমাত্র মৃত্যুই তার দায়িত্ব থামাতে পারে বলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনের আক্ষেপ জানান ৬২ বছরের সুফিয়া বেগম। কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় সরকারের কাছে একটি থাকার ঘর চেয়েছেন। সুফিয়া বলেন,‘সরকার তো মাইনশেরে ঘর দেয়।
হামারে যদি একটা ঘর দিত তাইলে নাতি-পুতি নিয়ে হয়তো একটু ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।’ দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা সুফিয়ার জীবন শুরু থেকেই কষ্টের। বিধবা সুফিয়া বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, স্বামী ছাড়া একজন নারীর পক্ষে সন্তান মানুষ করা ও সংসার চালানো খুবই কষ্টের।
একেতো দরিদ্র পরিবার আবার স্বামী মারা যাওয়ার পর ২ সন্তানকে লালন পালন করে বড় করা। এখন আবার বিধবা মেয়ে ও নাতি পুতি নিয়ে ৯ জনের দায়িত্ব নিতে গিয়ে আমাকে নির্মম যন্ত্রণা ও কষ্ট পেতে হচ্ছে। এভাবেই নিদারুণ কষ্টে চলছে বিধবা সুফিয়া বেগমের সংগ্রামী জীবন।