ইরানেরা পরমাণু ইস্যুতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এক ফোনালাপে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং এই বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ওয়াশিংটন ও তেহরান আলোচনা নিয়ে গত সপ্তাহে তাদের মধ্যে এই উত্তপ্ত বাক্যালাপ হয়।
মঙ্গলবার ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ‘ইসরাইল টাইমস’-এর এর উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এই খবর জানায়।
বরাবরই নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের দহরম-মহরম সম্পর্ক দেখা গেছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরাইল চলমান সামরিক আগ্রাসন ও অবরোধ এবং ইরান ইস্যুতে সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে ইরানকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বটা বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে।
ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প ফোনালাপে নেতানিয়াহুকে বলেছেন, তিনি ‘ইরানিদের সাথে একটি কূটনৈতিক সমাধান’ চান। তার কথায়, ‘আমি বিশ্বাস করি, ইরানের সঙ্গে একটা ভাল চুক্তি করার সক্ষমতা আমার আছে।’ তিনি জোরের সাথে বলেছেন, একটি সম্ভাব্য চুক্তি উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে।
চ্যানেল ১২-এর তথ্য মতে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ফোনালাপের খবর অস্বীকার করেছে। তবে উত্তপ্ত ফোনালাপ নিয়ে প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা এবং একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোন করে সতর্ক করে বলেছেন, নেতানিয়াহু যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেন যাতে সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনা বিপন্ন হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালাতে পারে অথবা অন্য পদক্ষেপ নিতে পারে যা চলমান আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে দ্রুত হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে যদি মার্কিন-ইরান পরমাণু আলোচনা ভেস্তে যায়, তাহলে এই হামলা চালানো হতে পারে।
সূত্রের বরাতে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইসরাইল বিশ্বাস করে যে, ইরানে একটি সফল হামলার কার্যকর সময় ও সুযোগ শিগগিরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ‘সবুজ সংকেত’ ছাড়াই হামলার নির্দেশ দিতে পারেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে অ্যাক্সিওস জানায়, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এই ফোনালাপ হয় গত বৃহস্পতিবার। এর একদিন আগে ওয়াশিংটনে একটি মিউজিয়ামের বাইরে গুলির ঘটনা ঘটে, যেখানে দুই ইসরাইলি দূতাবাস কর্মী নিহত হয়।
ওই কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের বার্তা হলো, ‘তিনি চান না যে নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে কোনো ঝামেলা করুন যখন তিনি (ট্রাম্প) সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।’
তবে ট্রাম্প এ কথাও বলেছেন, আলোচনা ভেস্তে গেলে ‘বিকল্প ব্যবস্থাও’ টেবিলে রয়েছে। তবে তিনি প্রথমে দেখতে চান যে কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব কিনা। অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এর আগে গত সোমবার ইসরাইল সফর শেষে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে এমন বার্তা দিয়েছেন যে ইরান ইস্যুতে দুই দেশের কৌশল যেন একই রকম হয়।
পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার ইতালির রাজধানী রোমে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে পরোক্ষ বৈঠকে যোগ দেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনায় বেশ ‘অগ্রগতি’ দেখা গেছে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তিনি এই বিষয়ে ‘সুসংবাদ’ পেতে পারেন।
এদিকে একমার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প চান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নেতানিয়াহু একই অবস্থানে থাকুক।
ইরানকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অবস্থান একই হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বার্তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানান নোয়েম।
সোমবার ইসরাইল সফর শেষ করে নোয়াম ‘ফক্স নিউজ’কে বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর সাথে তার আলোচনা তাৎক্ষণিক এবং সরাসরি হয়েছে।’
রোমে মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তাদের পঞ্চম দফা পরমাণু আলোচনার কয়েকদিন পর তার এই মন্তব্য এলো।
নোয়েম বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে বিশেষভাবে এখানে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করার জন্য। এটা স্পষ্ট করার জন্য যে আলোচনাগুলো কীভাবে চলছে এবং এক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা কতটা জরুরি তা বোঝানোর জন্য।’
রোববার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ইরানের সাথে পরমাণু নিয়ে আলোচনা ভালোভাবে এগিয়ে চলেছে।
গত সপ্তাহে, সংবাদমাধ্যম সিএনএন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আলোচনা সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইরান যেকোনো ইসরাইলি আক্রমণের জোরালো জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং নেতানিয়াহুকে মার্কিন কূটনীতিকে দুর্বল করার জন্য কাজ করার অভিযোগ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে বার্তা হল, আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট আছেন যিনি শান্তি চান, কিন্তু তিনি ভবিষ্যতে ইরানের পরমাণু ক্ষমতাও সহ্য করবেন না। তারা পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না এবং এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চিত করতে চান।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও তার সাথে একই অবস্থানে থাকুক, ট্রাম্প তাই চান বলেও জানান নোয়েম।
ইরানের সাথে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার একটি প্রধান বিষয় ছিল ইরানকে নিজস্ব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হবে কি-না তা নিয়ে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চান ইরান কেবল তার পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনবে তা নয়, বরং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুক। তেহরান এর তীব্র বিরোধিতা করেছে।