নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় লাগামহীন লোডশেডিং ও ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও পশুপালন খাতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে ট্রল, প্রতিবাদ ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য।
উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নেই দিনে-রাতে মিলিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এই অনিয়মিত ও রুটিনবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সামর্থ্যবান গ্রাহকরা আইপিএস বা সৌরবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছেন বটে। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাটারি চার্জ করাও হয়ে উঠছে দুষ্কর।
বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলা এখনো আগের দিনের মতো হাতপাখা, হারিকেন কিংবা মোমবাতির উপর নির্ভর করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানপাটে ক্রেতা কমে গেছে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
এছাড়া অনেক খামারি জানিয়েছেন, গরুর ফার্মে ফ্যান বন্ধ থাকায় বিদেশি জাতের গরুগুলো গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে এবং চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়েও ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। একজন ভুক্তভোগী বলেন, “দিনে ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পাই এক ঘণ্টার মতো। অথচ বিল আসে আগের চেয়েও দ্বিগুণ। অফিসে গেলে বলা হয় ‘সংশোধন করে দিব’ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কেন্দুয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক জানান, গরম বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুতের ব্যবহারও বেড়ে যায়। অন্যদিকে মাওনায় অবস্থিত একটি পাওয়ার স্টেশনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেন্দ্রটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে কেন্দুয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ চাহিদা ২১ মেগাওয়াট হলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট।
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে নয়টি বিদ্যুৎ ফিডারের মধ্যে চারটি নিয়মিত বন্ধ রাখা হচ্ছে। পাওয়ার স্টেশনটি মেরামতের কাজ চলছে, চালু হলে লোডশেডিং কিছুটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ডিজিএম ওমর ফারুক জানান, উপজেলায় প্রায় আট হাজার মিটার নষ্ট রয়েছে। মিটার সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। নতুন মিটার সরবরাহ এলে বিল সংক্রান্ত সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। আপাতত গড় হিসাব করে বিল নিতে হচ্ছে। তবে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হচ্ছে বলেন তিনি।
সচেতন নাগরিকরা বিদ্যুৎ রিডিংয়ে স্বচ্ছতা আনতে মিটার রিডারদের মাধ্যমে গ্রাহকের স্বাক্ষরসহ রিডিং গ্রহণের দাবি তুলেছেন। এতে করে গ্রাহক নিজের ব্যবহারের পরিমাণ জানতে পারবেন এবং ভুতুড়ে বিল এড়ানো যাবে বলে মত দিয়েছেন তারা।
লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কেন্দুয়াবাসীর অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিককরণ এবং গ্রাহকসেবা উন্নয়নের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।