স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাকে খুন করা হয় । মাছের ঘের নিয়ে বিবাদের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঘটনার পরপরই নিহত তরিকুল ইসলামের লোকেরা গ্রামের ১৩ টি বাড়িতে ভাংচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং নার্সিং- এর ছাত্র সাগর বিশ্বাসকে তুলে নিয়ে যায়।
খুনিদের ধরতে ও সাগর বিশ্বাসকে উদ্ধার করতে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। রাত ৮টার দিকে নওয়াপাড়ার একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থল ডহর মশিয়াহাটিতে যান। তখনো সেখানে তরিকুল ইসলামের লাশ পড়েছিল। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে সংবাদকর্মীরা জানান, তরিকুল অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি এলাকায় অংশীদারদের সঙ্গে মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি তিনি অংশীদারদের কাছ থেকে গোটা ব্যবসা নিজনামে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
ডিড করে দেওয়ার কথা বলে পিন্টু বিশ্বাস নামে একজন অংশীদার তরিকুলকে ঘেরের কাছে ডেকে নেন। সেই অনুযায়ী তরিকুল মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তখন তরিকুলের সঙ্গে সুমন নামে একজন সহকারী ছিলেন। সুমন জানান, কথাবার্তার একপর্যায়ে অংশীদাররা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তরিকুলকে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে পিন্টু বিশ্বাসের ঘরে নিয়ে তরিকুলকে গুলি করলে সুমন জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যান।
সুমন জানিয়েছেন, ওই ঘরে মোট ছয়জন ছিলেন। প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা দেখতে পান, তরিকুলের মাথায় তিন রাউন্ড গুলি করা হয়েছে, শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলের বাড়িটি পিন্টু বিশ্বাসের বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। আশপাশে মাত্র চারটি বাড়ি আছে। রাত ৮টার দিকে বাড়িগুলো ফাঁকা ছিল। যে ঘরে তরিকুলকে খুন করা হয়েছে, সেখানে দুটি পাসপোর্ট পেয়েছেন স্থানীয়রা। একটি অমর বিশ্বাসের ছেলে বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের, অন্যটি ধীরেশ্বর বিশ্বাসের স্ত্রী দুর্গারানী বিশ্বাসের। স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন, দুর্গারানী হলেন পিন্টু বিশ্বাসের মা। কৃষক দল নেতা খুনের খবর পেয়ে অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ মর্গের উদ্দেশে নিয়ে যায়। ওসি আব্দুল আলিম বলেন, খুনিদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। সন্দেহভাজন দুইজনকে পুলিশ আটক করেছে। যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকী জানান, ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা জোরদারে অভয়নগর থানা, দামুখালি ও গাজীপুর ক্যাম্প এবং যশোর পুলিশ লাইনস থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকেও খবর দেওয়া হয়েছে। কারা, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।