ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্বািবদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও সমকামিতায় বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে এ শাস্তি পর্যাপ্ত নয় দাবি করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের শাস্তি ফের পর্যালোচনা করছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় শাস্তি পর্যালোচনার সিন্ডিকেট সদস্য ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমানকে নিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ ও শাস্তি পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার (১৬ মে) শিক্ষার্থীদের সাথে ড. আশরাফুর রহমানের মতবিনিময় সভা ডেকেছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কাজের জন্য ডেভেলপমেস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের ব্যাপারে বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা কর্তৃক গঠিত অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. আশরাফুর রহমান (ডিআইজি, ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, ঢাকা) আগামী শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ১০ টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনে বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীরা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উক্ত সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, ‘আগামীকাল হাফিজুল ইসলামের বিষয়ে তদন্তের জন্য তিনি ক্যাম্পাসে এসে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলবেন।’
এ বিষয়ে বিভাগটির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বোরহান কবির বলেন, ‘সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে কিন্তু তাকে বাধ্যতামুলক ছুটি দিয়ে লঘু শাস্তি দিয়ে দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। প্রশাসনের কেউ বা কোন শিক্ষক তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করবো আমরা।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামীতায় বাধ্য করা সহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে তার অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা হাফিজের এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানায়। দাবি আদায়ে গত ২৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন শাস্তি পর্যালোচনার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। এরই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।