নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার দুখিয়ারগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইকুল ইসলাম চান মিয়ার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক সাইকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য।
মঙ্গলবার (৬ মে) ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত শুরু এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ইউএনও। গত ৫ মে রাত ৯টার দিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ঘটনার কথা উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই শিক্ষার্থী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন শিক্ষক সাইকুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণির চারজন ছাত্রীকে স্কুল কক্ষে ডেকে এনে আসন্ন সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। একই সময় স্কুল মাঠে শুকাতে দেওয়া ধান বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে আশপাশের ১০-১২ জন কৃষক-কৃষাণী ধান গুছিয়ে স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিচ্ছিলেন।
পড়াশোনার এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী অমনোযোগী হলে শিক্ষক সাইকুল ইসলাম তাকে থাপ্পড় দেন। এতে মেয়েটি কান্নাকাটি করে বাড়িতে গিয়ে বিচার দিলে মুহূর্তেই ভুক্তভোগীর মামা তাফাজ্জলসহ স্বজনেরা ছুটে এসে শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। শিক্ষককের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন।
স্থানীয় পোলট্রি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, ঘটনার সময় আমরা প্রায় ১০-১২ জন ধান গুছাচ্ছিলাম। দেখি স্যার মেয়েটিকে থাপ্পড় দেন। এরপর মেয়েটির মামা এসে অভিযোগ তোলেন। তবে আমাদের জানা মতে, ঘটনাটি শুধু ওই কক্ষেই হয়েছে। আলাদা কোনো রুমে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখিনি।
ভুক্তভোগীর মামা তাফাজ্জল জানান, ঘটনার সময় স্কুল ঘরে শিক্ষক আর চারজন ছাত্রী ছাড়া কেউ ছিল না। রাতের খাবার খাওয়ার সময় আমার ভাগ্নি এসে জানায়, শিক্ষক তাকে যৌন হয়রানি করেছে।
ভুক্তভোগীর এক সহপাঠী আরও অভিযোগ করেন, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল, বিদ্যুৎ ছিল না। সাদিয়ার (ভুক্তভোগী) ঘুম পাচ্ছিল দেখে স্যার তাকে থাপ্পড় দেন। পরে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে খারাপ আচরণ করেন।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, আমি রাতের বেলা কেন্দুয়া পৌর সদরে থাকি। স্কুলের গেটের চাবি তিন সেটের মধ্যে এক সেট প্রতিষ্ঠাতা সাইকুল ইসলামের কাছে থাকে। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, তিনি রাত ৮টার দিকে স্কুল গেটে প্রবেশ করে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছিলেন। ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই হওয়া প্রয়োজন। যদি তিনি দোষী হন, শাস্তি পেতে হবে। অন্যথায় শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে একজন শিক্ষকের সম্মানহানি ঠিক নয়।
শিক্ষক সাইকুল ইসলাম জানান, আমি পরিস্থিতির শিকার। ভুক্তভোগীর পরিবার পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার বিরুদ্ধে এসব ন্যাক্কারজনক অভিযোগ করছে। আ.লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় গত ৫ আগস্ট থেকে ঠিকমত বাড়িতে থাকতে পারি না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে এ নাটক সাজানো হয়েছে।
স্থানীয়ভাব জানায়, শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা। তার স্ত্রীও এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এলাকায় শিক্ষানুরাগী হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি পরীক্ষার আগে দূর্বল ছাত্রীদের আলাদা করে সাজেশন দিয়ে ভালো রেজাল্টের জন্য চাপ দেন।এটা নতুন কিছু নয়।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর কাইয়ূম বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।