নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় তেলুজিয়া গ্রামের বিরিশিরি রিসোর্টে ১৯ বছর বয়সি তরুণীকে ধর্ষণ মামলায় একমাত্র আসামি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক (বর্তমানে দল থেকে বহিস্কৃত) মো. ফয়সার আহমেদ দুর্জয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল বর্তমানে করাগারে আছেন।
মো. ফয়সল আহমেদ দুর্জয় জেলার দুর্গাপুরের চন্ডীগড় গ্রামের মজিবুর রহমান ও মোছা. খাদিজা আক্তার দম্পত্তির ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ধর্ষণ ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো ও পরিকল্পিত ঘটনা উল্লেখ করে ফয়সাল আহমেদ দুর্জয়ের মা নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে দুর্গাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
মোছা. খাদিজা আক্তার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার পুত্র মো. ফয়সাল আহাম্মদ দুর্জয় একজন সহজ সরল, নম্রভদ্র স্বভাবের মানুষ। সে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে জড়িত থেকে সুনামের সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। কোন সময়ই সে কোন ধরণের অসামাজিক এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত ছিল না। কিছুদিন ধরে তাকে বিভিন্নভাবে মান-সম্মান নষ্ট করার জন্য বা সামাজিকভাবে হ্যাস্তনেস্ত করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি, বন্ধু দাবী করে তার সাথে মেলামেশা করে আসছিলো যা আমার পুত্র বুঝে উঠতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমার পুত্রকে জড়িয়ে ধর্ষণ কার্যক্রমের যে নাটক সাজিয়ে মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো এবং পরিকল্পিত ঘটনা। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মূলত যে নারী আমার পুত্র দুর্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সে প্রকৃতপক্ষে একজন দুশ্চরিত্রা মেয়ে ও একজন কলগার্ল। এই খবরও আমরা জেনেছি। এই মেয়েটি অর্থাৎ প্রমি আক্তার এটাই তার চরিত্র ও ব্যবসা। সে মেয়েটি ও মুন্না মিয়া উভয়েই সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এর সক্রিয় কর্মী। সম্প্রতি নাটকীয় ঘটনার পর ওই মেয়ে অর্থাৎ প্রমি আক্তারের অসামাজিক এবং কু-কর্মের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রকাশ পেয়েছে। যা সকলেই অবগত আছেন। এতেই প্রমাণিত হয় এই মেয়েটি কলগার্ল।
দুর্গাপুর থানার ওসিকে দোষারোপ করে মোছা. খাদিজা আক্তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মামলার বাদী প্রমি আক্তারের জবানবন্দি অনুযায়ী আপনারা (সাংবাদিকবৃন্দ) মামলার এফআইআরটি পড়লে বুঝতে পারবেন যে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মুন্নার সাথে রিসোর্টে অবস্থান করে আসছে। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে গেলে দুর্গাপুর থানার ওসি মাহমুদুল হাসান রিসোর্টে গিয়ে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসে এবং প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে উৎকোচের বিনিময়ে ছাত্রলীগ কর্মী মুন্নাকে বাঁচানোর জন্য আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেয়। প্রকৃত ধর্ষণকারী মুন্নাকে দুর্গাপুর থানার গত বছরের ২২ নভেম্বর তারিখের পুরাতন একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায়। উৎকোচের বিনিময়ে ওসি মাহমুদুল হাসানের সহযোগিতায় ধর্ষণ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে। সেজন্যই ছাত্রলীগ নেতা ও প্রকৃত ধর্ষণকারী মুন্নাকে রক্ষা করে ছাত্রদল নেতা ফয়সাল আহাম্মদ দুর্জয়কে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ফয়সাল আহাম্মদ দুর্জয় নামের ছাত্রদল নেতাকে অভিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জোর দাবী জানান মোছা. খাদিজা আক্তার।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকের ঘটনা। অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী দুজনের কাউকে আমি আগে থেকে চিনতাম না। উৎকোচ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাদীর দায়ের করা মামলায় একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামি ফয়সার আহমেদ দুর্জয়। আইনের ভিত্তিতেই পুলিশ কাজ করেছে। এখানে দোষারোপ করার কিছু নেই।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় ২৯ এপ্রিল বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তরুণীসহ মো. ফয়সাল আহমেদ দুর্জয় ও তার বন্ধু জেলা ছাত্রলীগ নেতা আবিদ হাসান মুন্না মিয়া ও হোটেল ম্যানেজার পিষুষ দেবনাথকে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর ওইদনি রাতিই ভু্ক্তভোগী তরুণী থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরের দিন ৩০ এপ্রিল দুর্জয়কে জেলা আদালতে প্রেরণ করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় এ ঘটনায় ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকম’ অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার আলম এলিন ও সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহাবুব চৌধুরী তাদের দুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক মো. ফয়সাল আহমেদ দুর্জয়কে দল থেকে বহিস্কারাদেশ প্রদান করেন।