নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি এলাকায় অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার এক ১১ বছরের কিশোরীর দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে স্থানীয় এক আইন সহায়তা বিষয়ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি অবগত হয়ে তিনি তাৎক্ষণিক ভিকটিমের বাসায় ছুটে যান এবং তার চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেন তিনি।
জানা গেছে, গত ৭ মার্চ বিকেলে ওই কিশোরী কেন্দুয়া পৌর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণের শিকার হয়। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পরিবারের সদস্যরা তার কোনো সন্ধান পাননি। পরে ১৭ মার্চ অপহরণ চক্রের এক সদস্য মোবাইল ফোনে কিশোরীর বড় বোনকে ফোন করে নির্যাতনের কথা জানান। বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীর বাবা কেন্দুয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৯ মার্চ প্রধান আসামি মুসলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। যিনি গন্ডা ইউনিয়নের মরিচপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পরদিন ২০ মার্চ দুপুরে ভিকটিম গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে ফিরে এলে তাকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আদালতে জবানবন্দি প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মেয়েটি পরিবারের কাছে ফিরে আসে।
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মেয়েটির চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছিল। এতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং পরিবারও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরলে তা ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদারের নজরে আসে।
সোমবার বিকেলে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকুল ইসলাম খানের উপস্থাপনায় আইন সহায়তা অনুষ্ঠানে বিষয়টি তুলে ধরলে ইউএনও তাৎক্ষণিক ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে তার অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে তিনি মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং পরিবারকে প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহায়তা দেন। এ সময় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রহিমা আক্তার, প্রেসক্লাব সভাপতি সেকুল ইসলাম খান এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন খানও পরিবারের পাশে দাঁড়ান।
ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, মেয়েটির শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তাকে হাসপাতালের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হবে। পরিবারটি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় আমরা সহায়তা করছি এবং প্রয়োজনে আরও সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শহীদুল ইসলাম জানান, ভিকটিমের বাবা অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। ভিকটিম আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে দুজন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় ধর্ষণের ধারাও সংযুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।