নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় সদর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাকে মারধর করে কম্পিউটারসহ যন্ত্রপাতি ভেঙে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে ওই পরিষদের এক সদস্যের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী রাজেশ্বর দেবনাথ উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোপাল দেবনাথের ছেলে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরের দিকে আহত উদ্যোক্তা রাজেশ্বর দেবনাথকে (৩৩) উন্নত চিকিৎসার জন্য খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত রবিবার বিকেলে পরিষদের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. রাসেল মিয়া (৩৫)। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড পুরানহাটি এলাকার বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তিনি (রাজেশ্বর দেবনাথ) গত ২০১২ সাল থেকে পরিষদে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে আসছেন। ৫ আগস্টের পর পরিষদের সদস্য রাসেল মিয়া তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের নিবন্ধন করাতে গিয়ে ইউপি মেম্বার রাসেল মিয়া উদ্যোক্তাকে কোন রকম টাকা দেন না। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মেম্বার উদ্যোক্তার কাছে উল্টো ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা না দেয়ায় তাঁকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। পরে বাধ্য হয়ে গত অক্টোরবর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাসেলকে তিন হাজার টাকা চাঁদা দেন বলে জানান রাজেশ্বর।
এর সপ্তাহখানেক আগে রাসেল অন্য উপজেলার এক শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে রাজেশ্বরকে চাপ দেন। কিন্তু নিয়মবর্হিভুত কাজ না করায় রাজেশ্বরের প্রতি তিনি আরও ক্ষিপ্ত হন। গতকাল রবিবার বিকেলে রাসেল মিয়া তাঁর পরিচিত অন্তত ১২ জন সুবিধাভোগীকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা দরের চাল পেতে ভুক্তভোগীকে দিয়ে নিবন্ধন করান। পরে রাজেশ্বর প্রতি আবেদন ৫০ টাকা করে ফি চাইলে রাসেল তাঁর লোকজন নিয়ে রাজেশ্বরকে বেধরক মারধর করেন। একই সঙ্গে কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ভুক্তভোগীকে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী রাজেশ্বর দেবনাথ আরও জানান, তাঁর বড় ভাই ইউনিয়ন বিএনপ’র সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ভাইয়ের দাপট দেখান ইউপি মেম্বার রাসেল মিয়া।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার রাসেল মিয়া বলেন, ‘রাজেশ্বর একটা বেয়াদব। তিনি পরিষদে সেবা গ্রহিতাদের হয়রানি করেন। কোন কাজ করলে তাঁকে দুই-তিনগুণ টাকা দিতে হয়। গতকাল আমার লোকদের নিবন্ধন প্রতি ৩০০ করে টাকা চাওয়ায় দুজনের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।
ইউপি সচিব সমর সরকার বলেন, মারামারির সময় আমি ভেতরে অন্যস্থানে ছিলাম। তবে ওই পরিষদের আরেক মেম্বার মো. মজলু মিয়া আমাকে (সমর) জানায় প্রথমে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কি আমি থামিয়ে দিয়ে পরিষদের বাহিরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মজলু বাহিরে চলে আসে। এ মূহুর্তে রাসেল মেম্বারের ভাই খবর পেয়ে পরিষদে ঢুকে রাজেস্বর দেবনাথকে মারধর করে এবং কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আবু ইছহাক বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি পরিষদে ছিলাম না। ইউএনও স্যারের নির্দেশে এ ঘটনায় প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে।’
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, ‘আহত উদ্যোক্তার বাবা কিছুক্ষণ আগে আমার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালিয়াজুরী থানার ওসি মো. মুকবুল হোসেন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরর্বতী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।