আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ
জন্মের সাথে সাথে ভাই-বোনের সম্পর্ক শুরু হয়। একই ঘরে, একই পরিবারে বড় হওয়া, একই খেলনা নিয়ে খেলা, স্কুলে পড়া – এইসবের মাধ্যমে গড়ে ওঠে স্বর্গীয় ভালোবাসার ভিত্তি। আদরের সেই অপরিণত বয়সের বোনটিকে যখন কেউ অপহরণ করে নিয়ে যায় আর প্রশাসন তেমন কোন সহযোগিতাই করে না তখন অভিমানে নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদ জানালো আপন বড় ভাই । তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে দীপিকা মোহন্ত (১২) । চলতি এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে অপহৃত হয় সে ।
বোনের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাতে থাকে ভাই দিপু মোহন্ত । বাবা বাবুল মোহন্ত বোন দীপিকাকে উদ্ধারের চেষ্টায় কোন ত্রুটি করছেনা জেনেও বারবার চোখের পানি ঝরিয়ে বিলাপ করছিল দিপু। বোন দীপিকাকে উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা নেই, খবরটি শুনে যেন পৃথিবীর ওপর মায়া ছেড়ে দিয়েছিল দিপু ।
বোন অপহরনের ১৫ দিনের মাথায় অসুস্থ দিপুর প্রাণহীন নিথর দেহ তাদেরই উঠোনে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় রবিবার সকাল ১০ টায় । নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কাঠগাড়ি (গোয়ালপাড়া) এলাকার বাবুল চন্দ্র মোহন্তের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে দীপিকা মোহন্ত (১২) অপহৃত হয় । এ নিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তারাগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয় বাবুল । অভিযোগকারী বাবুল চন্দ্র মোহন্ত জানান, আমার মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য অনেক অনুনয় করেছি তারাগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই রউফকে ।
কিন্তু অপহরনের আজ ১৫ দিন হয়ে গেলেও পুলিশের কোন ভূমিকা নেই । এদিকে বোনের অপহরনের শোকে আজ আমার ছেলেটি মৃত্যুবরণ করেছে । অপহরণকারীদের দালালরা নাকি থানায় ঘোরাঘোরি করছে । কিন্তু আমার ১২ বছর বয়সী মেয়ের কোন খোঁজ নাই, কেউ জানাচ্ছেও না মেয়েটি বেঁচে আছে নাকি দুষ্কৃতিকারীরা মেরে ফেলেছে । অবাক করা ব্যাপার হল, তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে এসে পরে শুনি অভিযোগের কপি খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ । থানায় জমা দেওয়া অভিযোগটি অজানা কারণে হারিয়ে গিয়েছিল থানা থেকে ।
নানা নাটকীয়তার পরে ওসি তদন্তভার দেয় এসআই রউফকে । এরপরে শুরু হয় তদন্তের গড়িমসি । অনেক যোগাযোগ আর অনুরোধের পর নামমাত্র তদন্ত করেন এসআই রউফ । কিন্তু ওই যে তদন্ত করে গেল আর কিছুই জানালো না । একাধিকবার বিভিন্ন লোক মারফত মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তিনি ফোন ধরেন না । তারাগঞ্জ থানায় গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়না । মেয়েটিকেই ফিরে পেলাম না তারওপর ফুটফুটে যুবক ছেলেটিকে হারালাম । আমারও আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে নাই । আমি কাকে নিয়ে বাঁচব, বলুন ? দীপিকা ও দিপুর মা শ্রীমতি ঝর্না মোহন্ত জানান, “হামরা এক ছওয়ালের (সন্তান) জন্য আরেক ছওয়াল হারাইনো ।
কিন্তু মরার পুলিশের ঘুম ভাঙ্গার হুদিস নাই । শুনছি মোর বেটিক যারা নিয়া গেছে তারা থানায় বড় ভোগ দিছে। সেই জন্যে হামার আহাজারি কানোত ঢোকে না ওমার।” সরেজমিনে বাবুলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দীপিকা অপহরনের পর থেকেই দিপু মুমূর্ষ হয়ে পরেছিল । বোনের চিন্তায় তার অসুস্থতা বেড়ে যায় । অপহরণকারীদের বাসার আশপাশে ঘোরাফেরা করত বোনকে এক নজর দেখার জন্য । এলাবাসীরা জানায়, দিপুকে তারা রাস্তার দিকে এক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে অসংখ্যবার । অনেকে বুঝিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসলেও কিছুক্ষণ পরে আবারও এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত ।
অপহরনের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে তারাগঞ্জ থানার এসআই রউফের সাথে একাধিক দিন বারংবার গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে । কিন্তু ওই এসআই রউফ কোন সাড়া দেয়নি। মুঠোফোন তিনি রিসিভ করেননা। যোগযোগ স্থাপন করা যায়নি তাই অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কতদূর এগিয়েছে সে ব্যাপারে তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ।