নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনায় হেফাজতে ইসলামের এক নেতাকে মারধর ও বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অব্যহাতি পাওয়া নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়া। তিনি সদর উপজেলার তিনি মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ও ছোট গরদী গ্রামের বাসিন্দা।
আর ভুক্তভোগী হলেন, একই ইউনিয়নের হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বড় গরদী বাগানবাড়ী মসজিদের ইমাম মাওলানা আনিছুর রহমান।
পদ থেকে বিএনপি নেতার অব্যাহতি নিয়ে হেফাজত নেতা-কর্মীদের দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। হেফাজতের দাবি রেনু মিয়াকে দল থেকে স্থায়ী বহিস্কার এবং প্রধান আসামিসহ সকল আসামিকে মঙ্গলবারের মধ্যে গ্রেফতার।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরআগে গত শনিবার জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. আনোয়ারুল হক ও সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী রেনু মিয়াকে দল থেকে অব্যাহতি প্রেস বিজ্ঞপিতে স্বাক্ষর করেন।
গত বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ছোট গরদী এলাকায় হেফাজত নেতার বাড়ি ভাঙচুর ও তাকে মরধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা আজ (রবিবার) শামীম মিয়া নামে এক আসামিকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এতে করে হেফাজত নেতাদের মাঝে আরও বেশি ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রেনু মিয়ার নেতৃত্বে ছয়টি মোটরসাইকেল যোগে ছোট গরদি দাখিল মাদরাসায় আসেন ১০-১২ জন সন্ত্রাসী। পরে তারা মাদরাসার অফিসে অনধিকার প্রবেশ করে চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসী কায়দায় বেদড়ক মারধর ও লঞ্চিত করে মাদরাসার সুপার মো. আব্দুল খালেক খানকে টেনে হিছরে বের করে দিয়ে অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেন।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী সুপার ওইদিন থানায়, উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ও সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ঘটনার পরেরদিন ৯ এপ্রিল গরদি দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থী-এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী হেফাজত নেতা আনিছুর রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ইউপি বিএনপি’র সভাপতি রেনু মিয়ার নেতৃত্বে তার ছেলেরাসহ অনুগত সহযোগীরা হেফাজত নেতার বাড়িতে বেআইনি জনতাবদ্ধে দেশী অস্ত্র নিয়ে অনধিক প্রবেশ করেন। বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও অর্থ চুরির অভিযোগ উঠে রেনু মিয়া ও তার সহযোগীদের ওপর।
পৃথক দুই ঘটনায় দুই মামলায় মৌগাতি ইউপি বিএনপির সভাপতি রেনু মিয়াকে প্রধান আসামি করে নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলার দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেন নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ।
এদিকে গত বুধবার রেনু মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সুপারকে মারধরের অভিযোগে অনুষ্ঠিত হওয়া মানববন্ধনের প্রতিবাদে পরেরদিন বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় হাটখলা বাজারে রেনু মিয়ার লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন রেনু মিয়া।
রেনু মিয়াকে দল থেকে অব্যাহিতর বিষয়ে হেফাজত ইসলামী মৌগাতি ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম জানান, তাকে দল থেকে অব্যাহিত দিয়েছে। পরবর্তীতে রেনু মিয়াকে অন্য পদ বা তার থেকে আরও বড় পদে বসাতে পারে। আমরা তো এটা চাই না। আমরা তো তার বহিস্কার চাই। তাকে দল থেকে বহিস্কার করতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম আরও জানান, শামীম নামে এক আসামিকে গ্রেফতারের পরে সম্ভবত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় হেফাজতের পক্ষ থেকে অবস্থান কর্মসুচীর ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচী সফল করতে উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবে বলে জানান এই হেফাজত নেতা।