দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি –
টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টমেটো। কিন্তু সেই টমেটো তুলতে আগ্রহ নেই কৃষকের। ফলে ক্ষেতের পাকা টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। এমন চিত্র দেখা গেল নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটোর আবাদ করেছে কৃষকরা।
কিন্তু এবার টমেটো চাষ করে বিপাকে পড়েছে তারা। কৃষকরা বলছেন, টমেটো বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তার সমান সমান খরচ হচ্ছে বাজারজাত করতে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এ বছর উৎপাদন খরচ না উঠাতে পারায় আগামী বছর টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে কথা হয় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চকলেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি এ বছর ১ এককের বেশি জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে টমেটো চাষ করেছেন। ভালো ফলনও হয়েছে। শেষ সময়ে ক্ষেতে পানি শূন্যতা দেখা দিলে আরো ৩০ হাজার টাকা খরচ করে পানির মোটর বসিয়েছেন। এ বছর উৎপাদন খরচ মিটিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভবান হবেন এ আশা করেছিলেন কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হয়নি বরং দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। এখন বাজারে নিয়ে গেলে পাইকারি ক্রেতা রাও কিনতে চান না। যার কারণে টমেটো ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হচ্ছে, কি করবো? কিছু করার তো নাই। অল্প খরচে বেশি লাভ টমেটোতে। প্রতিবছর মৌসুমের এই সময়ে ক্ষেত থেকে পাকা টমেটো তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।
বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি ২ টাকা থেকে হঠাৎ সর্বোচ্চ ৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা দরে। দাম না থাকায় এবং বাজারজাত করতে না পারায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না। চকলেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক আশিকুল ইসলাম ৬৪ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কিন্তু লাভের আশা তো দূরের কথা খরচের টাকাও উঠাতে পারছেন না তিনি।
তারই মতো আরেকজনক কৃষক আব্দুর রশিদ। তিনিও ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করে এখন বিপাকে পড়েছেন। তারও ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্টের ফসল। আব্দুর রশিদ বলেন, এক ক্যারেটে টমেটো হয় ২৫ কেজি। ক্ষেত থেকে তুলতে ২০ টাকা খরচ, বাজারে নিতে ভাড়া আরও ২০ টাকা খরচ।
তারপর বাজারে নিতে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। আমাদের এ বছর অনেক বেশি লস হয়েছে। এখন এই টমেটো বাজারে নেওয়ার খরচ আর বিক্রি সমান সমান হয়ে যাচ্ছে যার কারণে আর বাজারে নিচ্ছি না, ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে, সবটাই লোকসান আমাদের। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস প্রতিবেদককে বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা না থাকলে মূলত বাজার মূল্য কমে যায়।
এছাড়াও এবার বন্যার পরবর্তী সময় বাড়িতে বাড়িতে বা আমাদের পুষ্টি বাগানে টমেটোর বীজ সরবরাহ করেছি। প্রত্যকের বাড়িতে ১০-১৫ টি চারা লাগানোর কথা আমরা বলেছি হতে পারে তাদের বাড়িতে টমেটো আছে এ জন্য বাজার থেকে কম কেনা হচ্ছে যার কারণে কৃষকদের উৎপাদিত টমেটো বাজার মূল্য কমে যাচ্ছে। তাছাড়াও বাহিরের ক্রেতাদের কাছেও হইতো বিক্রি করতে না পারছেন না কৃষকরা।