নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর উপর হামলার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হয় পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ খোকন। বহিষ্কার করার সংবাদ প্রকাশ করায় এবার সাংবাদিকদের পেটানোর প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবন।
শনিবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জ পৌর শহরের টেঙ্গাপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদকে বহিষ্কারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সমাবেশ করে এই হুমকি দেন জীবন। তার এই হুমকির বক্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে লাইভ করে প্রচার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবনকে বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, ফয়সাল আহমেদের দোষ হল সে সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলে। এই যদি অপরাধ হয় তাহলে আমার বহিষ্কার হতেও কোনো আপত্তি নাই। আমরা মিডিয়া ভাইদের বলতে চাই। এই অপপ্রচার বন্ধ করেন। নইলে আপনাদের যেখানেই পাবো সেখানেই পিটাবো, সেখানেই পিটাবো, পিটাবো!…
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ী জসিমকে কুপিয়ে মারাত্বক আহত করার ঘটনায় যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। শনিবার বিকেলে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলে জানান কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া।
মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে মোহনগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ খোকনকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার কোন ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবে না। একই সঙ্গে তার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন রকমের সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
স্থানীয় ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে জসিম উদ্দিন (৩৫) নামের ওই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার বিকেলে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের পাথরঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত জসিম উদ্দিন ঢাকায় রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আফিফ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী।
জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নিশা আক্তার জানান, জসিম উদ্দিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। গত বছরের ৬ আগস্ট যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদ তার স্বামীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। গত বৃহস্পতিবার জসিম উদ্দিন ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। পরদিন শুক্রবার মোহনগঞ্জ পাথরঘাটা এলাকায় ইফতারি কিনতে যান জসিম। এ সময় ফয়সাল তার সহযোগীদের নিয়ে জসিম উদ্দিনের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জানতে চাইলে যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি উপজেলা যুবদলের নেতা আমার এলাকায় কেউ ঝামেলা করলে আমরা তো পিটাবোই। সাংবাদিকরা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় এমন কথা বলেছি। জসিম উদ্দিন আদম ব্যবসা করতো। তার কাছে কেউ চাঁদা চায়নি।’
নেত্রকোনা জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি বলেন, আমরা কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেই। যারা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাইরে শৃংখলা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকে তাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আর সাংবাদিকদের বিরোদ্ধে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে।
নেত্রকোনা জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন রিপন বলেন, ‘দলের কোনো নেতার এভাবে কথা বলার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’