কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বোরো চাষে বিদ্যুতের সেচসংযোগ পেতে কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও সেচ কমিটির নিকট প্রায় দেড় বছর ধরে ঘুরাঘুরি করছেন কৃষক মো. হুজায়েল মুন্সী। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাকে দিচ্ছে না বিদ্যুতের সেচসংযোগ। এতে করে এ বছর উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর বৈঠাখালী গ্রামের মাঠে পানির অভাবে প্রায় দশ একর কৃষিজমি পতিত রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, বিশ্বনাথপুর গ্রামের কৃষক মো. হুজায়েল মুন্সী ২০২৩ সালে সেচ লাইসেন্স প্রাপ্ত হন (লাইসেন্স নং-১৭৬)। এরপর তিনি বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরাবরে আবেদন করেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুত সমিতি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন না।
নিরুপায় হয়ে মো. হুজায়েল মুন্সী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সেচ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও’র কাছে লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে কলমাকান্দার তৎকালীন ইউএনও আসাদুজ্জামান কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) তাপস দেবনাথকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
তাপস দেবনাথ আসাদুজ্জামানকে জানান এ নিয়ে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা চালু আছে। যার বাদী বিশ্বনাথপুর বৈঠাখালী গ্রামের মো. হুমায়ুন কবীর। পরে ইউএনও আসাদুজ্জামান বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি সরেজমিন যাচাই করে ইউএনও বরাবরে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবীর সেচ কমিটি কর্তৃক ২৩৪৬ দাগে লাইসেন্স প্রাপ্ত হন। কিন্তু তিনি ওই দাগে বোরিং না করে অন্য ২৩৪০ দাগে বোরিং করে অবৈধভাবে সেচ পরিচালনা করেন। পরে মেয়াদ শেষে হুমায়ুন কবীর সেচ লাইসেন্স নবায়ন না করার কারণে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। পরে তিনি পুনঃলাইসেন্স পেতে একটি অঙ্গীকার নামা জমা দেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন লাইসেন্স প্রাপ্তীর সাতদিনের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে বোরিং করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে আদালতে একটি মামলা করেন।
মো. হুজায়েল মুন্সী অভিযোগ করেন, কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) তাপস দেবনাথ মামলার কথা বলে আমাকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন না। বেশ কিছু দিন ধরে ঘুরাচ্ছেন। আদালতে হুমায়ুন কবীর যে মামলাটি করেছেন সেটি একটি ভুয়া মামলা। সে এক জায়গায় লাইসেন্স প্রাপ্ত হয় কিন্তু অন্য জায়গায় অবৈধভাবে বোরিং করেছেন। এখন আবার উল্টো মামলা করেছেন। শুনেছি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজনকে দিনে দু’য়েক দিনের মধ্যে হুমায়ুন কবীরের সেচ সংযোগ দিয়ে দিবেন। সংযোগ দিলে আমি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যে স্থানে বোরিং সেটার জমির দাগ নম্বর ও লাইসেন্স স্থানের দাগ নম্বর দুটোই আমার মায়ের নামে। একটু ব্যবধান। সেচ বসানোর আগে একটা তদন্ত করেছে বিদ্যুতের প্রকৌশলী। হয়তো আমার যে কোন দলিলমূলে ভুল হয়েছে। তিন একর জমি আছে। সেটার এসএ ও বিআরএস দাগটা ভুল হয়েছে। জমির দাগ সংক্রান্ত বিষয়টি চেয়ারম্যান ও সেচ কমিটির লোকজন আলোচনা করে আগেই সমস্যা সমাধান করে দিয়েছিল।
কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম মুর্তুজা মুঠোফোনে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এসব বিষয়গুলো আমার জানা নেই। সেচ লাইসেন্স দেয় উপজেলা সেচ কিমিটি। জমির দাগ সংক্রান্ত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাছে থেকে জেনে নেন। সরাসরি আসলে তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারি। সমস্যা গ্রাহকেরও থাকতে পারে আবার পল্লী বিদ্যুতের থাকতে পারে। না দেখে কিছু বলা যাবে না।
কলমাকান্দা উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাতের জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। না দেখে কিছু বলতে পারছি না।