দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

বাংলাদেশ এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন জনরোষ বিকল্প পথ বেছে নেয়। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, বিভিন্ন স্থানে মানুষ গণপিটুনির নামে বিচার করছে, যা একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে না, বরং আমাদের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধকেও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।

গণপিটুনির মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার করার প্রবণতা নতুন নয়, তবে এটি যখন ধারাবাহিক ও সহিংস রূপ নেয়, তখন তা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। আমরা কি ভুলে গেছি যে, কয়েকদিন আগেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলাম? তখন আমাদের শক্তি, সাহস ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনই স্বৈরশাসকদের পতনের কারণ হয়েছিল। তাহলে এখন কেন এই অনৈতিক পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে? গণতান্ত্রিক উপায়ে আইনি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চাপে রাখা কি সম্ভব নয়?

### **গণপিটুনি: ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা**

একটি সুস্থ রাষ্ট্রব্যবস্থায় অপরাধ দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যখন জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে শুরু করে, তখন সেটি স্পষ্টতই রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রমাণ। গণপিটুনির নামে যেসব ঘটনা ঘটছে, তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে নিরপরাধ মানুষকেও ভুল বোঝাবুঝির কারণে হত্যা করা হয়েছে। আইন যদি যথাযথভাবে কাজ করত, তবে জনগণ এই পথে যেত না।

একটি সমাজ যখন রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে, তখন সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করেছি, আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি কিভাবে মানুষের মনে ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিহিংসার শিকার শুধু প্রকৃত অপরাধীরাই হচ্ছে না, অনেক নিরপরাধ মানুষকেও হত্যা করা হচ্ছে। এটি কি আমরা চাই?

### **আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কেন আত্মঘাতী?**

গণপিটুনি কখনোই ন্যায়বিচারের মাধ্যম হতে পারে না। এটি সামগ্রিকভাবে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। যখন জনগণ নিজেদের বিচারক মনে করতে শুরু করে, তখন পুরো আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর ফলে দেশে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়, যেখানে যে কেউ যে কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করে হত্যা করতে পারে।

এই প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কী হবে? আজ যদি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গোষ্ঠী অন্য একটি গোষ্ঠীকে টার্গেট করে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করতে শুরু করে, তাহলে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে? নাকি তখন আমরা চিৎকার করে মানবাধিকার ও বিচারব্যবস্থার কথা বলব?

### **রাষ্ট্রকে চাপ দিন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন**

আমরা যারা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা যেন সে তার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করে। আমাদের সমাজকে বলতে হবে:

– **গণপিটুনির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।**
– **আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দক্ষ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।**
– **বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।**
– **অপরাধীদের দ্রুত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।**

আমাদের মনে রাখতে হবে, গণপিটুনি কোনো সমাধান নয়। এটি সাময়িক রাগের বহিঃপ্রকাশ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

যারা গণপিটুনিকে সমর্থন করছেন, তারা ভেবে দেখুন—আজ আপনি একজন অপরাধী মনে করে কাউকে হত্যা করলেন, কাল যদি আপনাকেই ভুল বোঝে কেউ হত্যা করে? তখন আপনার পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার কোথায় থাকবে?

আসুন, আমরা গণপিটুনিকে “না” বলি। গণতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রকে বাধ্য করি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কারণ, যে সমাজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, সেখানে অন্যায়ই নীতি হয়ে দাঁড়ায়।

**ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম**
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version