বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে অনেকেই গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, ন্যায়বিচারের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে সাধারণ জনগণের মনে প্রশ্ন উঠছে—এই দেশ কি আদৌ বদলাবে? নাকি আমরা চিরকাল এক অনিয়মের চক্রে ঘুরপাক খেতেই থাকব?
**আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা**
স্বাধীনতার পর থেকে বারবার দেখা গেছে, যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা নিজেদের অবস্থান রক্ষার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতি তারা দেন, ক্ষমতায় বসার পর তার বেশিরভাগই বিস্মৃত হয়। বরং দেখা যায়, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দমন-পীড়ন, লুটপাট এবং স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি আরও দৃঢ় হয়। ফলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে।
যারা আজ নিপীড়িত, তারাই ক্ষমতায় গেলে পূর্বতন শাসকদের মতোই আচরণ করেন। এই বাস্তবতা দেখে মনে হতে পারে, ক্ষমতা একটি এমন জায়গা, যেখানে গেলে বাস্তবতার জ্ঞান লোপ পায়, ন্যায়নীতি দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং ব্যক্তিস্বার্থই মুখ্য হয়ে ওঠে।
**সিস্টেমের পরিবর্তন কি সম্ভব?**
অনেকে বলেন, কোনো সিস্টেমই আমাদের দেশে কাজ করবে না। একদিকে জনগণের অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি—এই দুইয়ের সমন্বয়ে একটি জটিল অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে সৎ, যোগ্য, ও দেশপ্রেমিক মানুষগুলো টিকে থাকার জায়গা খুঁজে পান না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কি কোনো পথ নেই? পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব নয়? যদি পরিবর্তন সম্ভব না হয়, তাহলে কি আমরা চিরকাল এই দুর্ভোগের মধ্যে থাকব?
**পরিবর্তনের জন্য কী প্রয়োজন?**
দেশকে সঠিক পথে আনতে, সভ্য ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে—
১. **সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব:** যারা ক্ষমতায় যাবেন, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
2. **ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ:** একটি রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি তার বিচারব্যবস্থা। যদি এখানে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতি থাকে, তাহলে সাধারণ জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।
3. **শিক্ষা ও মূল্যবোধ:** একটি জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শেখাতে হবে।
4. **প্রশাসনিক সংস্কার:** দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন দিয়ে কখনোই একটি সভ্য দেশ গঠন করা সম্ভব নয়। প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
5. **সচেতন নাগরিক সমাজ:** কেবল সরকার বা রাজনীতিবিদদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। জনগণকেও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
**আমাদের করণীয়**
এত হতাশার মধ্যেও আমাদের ভাবতে হবে—আমরা নিজেরা কী করছি? আমাদের চিন্তা, কাজ, ও দৈনন্দিন জীবনে আমরা কতটা নিয়ম মেনে চলছি? পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে আগে নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।
আমরা যদি মনে করি, এদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাই, তাহলে পরিকল্পিতভাবে, ধাপে ধাপে, দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে নেওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ একদিন বদলাবে—এই বিশ্বাসটুকু অন্তত বেঁচে থাকুক।
*ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম*
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র