সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তবে এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মূলত তথ্যের বিশুদ্ধতা ও প্রসারের ধরন।
অতীতের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি কেমন, সে বিষয়ে পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করা জরুরি। অনেকেরই অভিমত যে, অতীতেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটতো, কিন্তু তখন তা এই মাত্রায় আলোচিত হতো না। বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমের বিস্তারের ফলে এমন ঘটনাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
এক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ:
১. বর্তমান সরকার আমলে অপরাধের হার আসলেই বেড়েছে, নাকি প্রচারের ফলে তা বেশি মনে হচ্ছে?
2. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে?
3. সরকারের দায়িত্ব কি শুধুমাত্র অপরাধীদের ধরতে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে?
সাম্প্রতিক কিছু পোস্ট ও বিতর্কে বলা হচ্ছে, এখন ঢাকায় যে কয়েকটি ঘটনা ঘটছে, তা সামাজিক মাধ্যমে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। কেউ কেউ এমনও দাবি করছেন যে, কিছু ছবি ও ভিডিও অন্য দেশের ঘটনা, যা ঢাকার বলে প্রচার করা হচ্ছে। তাই তথ্য যাচাই ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা একান্ত প্রয়োজন।
অপরদিকে, সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাও এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে অনেকেই অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। যখন সরকার অপরাধ দমনে ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ নানা ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে—কখনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, কখনও রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। অপরাধবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, দারিদ্র্য ও বৈষম্য অপরাধ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। যদি সরকার সুশাসন নিশ্চিত না করতে পারে, তবে অপরাধ দমনের প্রচেষ্টা কার্যকর হবে না।
পরিশেষে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?
১. অপরাধের সঠিক পরিসংখ্যান ও তথ্য বিশ্লেষণ করা।
২. সরকারের কার্যকরী ভূমিকাকে উৎসাহিত করা এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
৩. সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো এবং তথ্য যাচাই ছাড়া গুজবে কান না দেয়া।
৪. রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অপরাধের কারণ ও প্রতিরোধ নিয়ে গভীর গবেষণা করা এবং কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা।
আমাদের সবার দায়িত্ব একটাই—তথ্যভিত্তিক আলোচনা করা এবং অপরাধ প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজা।
**লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম**
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র