নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কলমাকান্দার দুর্গম পাতলাবন পাহাড় এলাকায় নানা আয়োজন ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশের (জিবিসি) ১৩৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেঘালয় সীমান্তে চার্চ প্রাঙ্গণ এলাকায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রভু যিশুর উদ্দেশ্যে মোমবাতি প্রজ্বালন ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান গতক রোববার গভীর রাতে শেষ হয়।
‘বাক্যের কার্যকরী হও, স্রোতা মাত্র হইওনা’ মূলসুরকে প্রতিপাদ্য করে এবং ‘রাত্রি প্রায় গেল, দিবস আগত প্রায় ; অতএব আইসো অন্ধকারের ক্রিয়া সকল ত্যাগ করি এবং দীপ্তির জণসজ্জা পরিধান করি’ মূল বচনকে ধারণ করে পাতলাবানমণ্ডলী গারামপাড়া বিভাগ এই অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা করে। এতে নেত্রকোনা ছাড়াও শেরপুর, টাংইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ এই সাতটি জেলায় বসবাসরত গারো ব্যাপ্টিস্ট মতাদর্শের অন্তত ১২ হাজার ১৫৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। মাঠে তাবু গেড়ে পরিবার নিয়ে অবস্থান করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বুধবার ‘যে বলে আমি জ্যোতিতে আছি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে এখনো অন্ধকারে রহিয়াছে’ শিরোনামের সন্ধোপাসনা করান পাস্টার ইপাফ্রা চাম্বুগং। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ‘আর দ্রাক্ষারসে মুক্ত হইও না, প্রভুর উদ্দেশ্যে গান ও বাধ্য করো’ শিরোনামে প্রাতোপাসনা করান পাস্টার মনোজ চাম্বুগং। তৃতীয় দিন শুক্রবার ‘কিন্তু তোমরা সর্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে তাহা এড়াইতে এবং মনুষ্যপুত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে শক্তিমান হও’ শিরোনামে ধর্ম উদ্দীপনা সভায় বক্তা ছিলেন রেভারেল পিটার দিবাকর মজুমদার। চতুর্থ দিন শনিবার দুপুরে জিবিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই বছর মেয়াদের জন্য পাস্টার বরুন কুমার দারিং এবং সহসভাপতি পাস্টার শিশির কুমার দাজেলকে নির্বাচিত করা হয়। আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে পাস্টার সুপ্তিলতা মাংসাং, পাস্টার কর্নেল চিসিম, ফাইন্যান্স বোর্ড পরিচালক পাস্টার তড়িৎ মানখিন, সহকারী ফাইনান্স বোর্ড পরিচালক ডিকন সেলেস্টিন ম্রং, ফাইনান্স বোর্ড সদস্য লোচন সাংমা, মায়া মান্দা, সুরভী মান্দা, পাস্টার তুষার ম্রং ও পাস্টার রতিন্দ্র ম্রং কে নির্বাচিত করা হয়।
ওই দিন সন্ধ্যায় ‘রাত্রি প্রায় গেল, দিবস আগত প্রায় ; অতএব আইসো অন্ধকারের ক্রিয়া সকল ত্যাগ করি এবং দীপ্তির জণসজ্জা পরিধান করি’ শিরোনামে ধর্মউদ্দীপনা সভায় বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রেভারেল জন সাগর কর্মকার। ‘আর উপকার ও সহভাগিতার কার্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন ‘ শিরোনামে রাবিবারিক উপাসনা করান পাস্টার রতন আজিম।
অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আসা উন্নয়নকর্মী স্বাগতা চিসিম বলেন, ‘পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলন গতকাল গভীর রাতে শেষ হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হৃদয় পবিত্র মনে হচ্ছে। প্রভু যিশুর গুণকীর্তন, ধ্যানচর্চা, বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রভু দেয়া মানবকল্যাণের মর্মবাণী ধারণ ও অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ধাইরপাড়া এলাকার লাভলি ম্রং ঢাকায় একটি বিদেশি সংস্থায় চাকুরি করেন। তাঁর পরিবারের সদস্য নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মূলত এটি বার্ষিক সম্মেলন হলেও এখানে আমরা যিশুর অসম্প্রদায়িক চেতনা লাভ করি এবং তা প্রচার করি। আমরা সব জাতিগোষ্ঠী মিলে বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিতে চাই।’
জিবিসির ফাইনান্স বোর্ডসদস্য লোচন সাংমা বলেন, ‘এই সাধারণ সভায় শান্তি, সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ- এসব মানবিক আচরণই শিক্ষা দেয়া হয়েছে।’
সাধারণ সম্পাদক পাস্টার সুরঞ্জন দিব্রা বলেন, ‘পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ হয়েছে। এখানে আমরা বাইবেলের বিভিন্ন শিক্ষা লাভ করেছি। এই শিক্ষা আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের প্রতি বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি করেছে।’