দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

মোঃ বাবুল হোসেন, জয়পুরহাট সংবাদদাতাঃ

প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তার পাশে টিনের ছাউনি দিয়ে এক চিলতে জীর্ণ একটি ছাপড়া ঘর। যার এক পাশে টিনে বেড়া দেওয়া থাকলেও তিন দিকে নেই কোন আবোরণ । সেই ঘরের খুঁটির সাথে দুই হাত আর পায়ে শিকলে বাধা অবস্হায় লেপ কাঁথার স্তুুপের উপর বসে আছে মানসিক ভারসাম্যহীন মেহেরুল (৩৬)। খাওয় দাওয়া, প্রসাব পায়খানা হয় সেখানেই। কনকনে শীত আর ঝড় বৃষ্টির মাঝে চলে তার দিনের পর দিন । পরিবেশটা নির্মম, প্রীড়াদায়ক আর নিষ্ঠুরতার । বছর কালের অধিক সময় ধরে এমনি করেই যাপিত জীবন তার। শত কষ্ট আর যন্ত্রণায় মুক্তির জন্য চিৎকার করলেও মুক্ত মিলে না পাগল মেহেরুলের । এটা এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় । এনিয়ে চার পাশের কারো মনে নেই কোন অনুভূতি । আর এভাবেই দীর্ঘ বছর ধরে চলছে তার শিকল বাঁধা অসহায় জীবন।মেহেরুল উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের ধরঞ্জী ( মাস্টারপাড়া) গ্রামের হত দরিদ্র আব্দুল আলিমের ৭ ছেলে মেয়ে মধ্যে বড় সন্তান ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জন্মের পর দরিদ্র পিতার সংসারে ভালই চলছিল তার জীবন। মেহেরুলের কৈশোর জীবনের শেষ সময়ে তার মা মেরিনা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসা করার পর সুস্থ্য না হওয়াই সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মেহেরুলের বাবা আব্দুল আলিম। মেরিনা বেগমের ঠাঁই হয় তার বাবার বাড়ি । এদিকে প্রথম পক্ষের সন্তানদের আপন সন্তানের মত আগলে সংসারের হাল ধরেন দ্বিতীয় স্ত্রী শাহেরা বেগম । এমন অবস্থায় মেহেরুলও তার মা মেরিনা বেগমের মতই হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে । দিন মজুর আব্দুল আলিম সাধ্যমত চিকিৎসা করে মেহেরুলের । কিন্ত কোন ফল হয়নি। এক পর্যায়ে মেহেরুলের পাগলামিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। ফলে শিকলে বাধা পড়ে তার জীবন। এরপরও দরিদ্র পিতা সহায় সম্বল বন্ধক রেখে ও ধার দেনা করে বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করান। চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ্য হয়ে উঠলেও কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। মেহেরুলের চিকিৎসা করাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন আব্দুল আলিম। এক সময় কিছুটা সুস্থ্য হলে মেহেরুলকে বিয়ে দেয়া হয় । বিয়ের পর বেশ ভালই ছিল মেহেরুল। এসময় তার একটা পুত্র সন্তানও হয়। সন্তান বায়োজিদের বয়স যখন ৮ বছর তখন আবারো মেহেরুলের মাঝে দেখা মানসিক সমস্যা । ফলে নেমে আসে মেহেরুলের সংসারে অশান্তি । এবার ৮ বছর বয়সী শিশু সন্তান বায়েজিদ কে রেখে সংসার ছেড়ে চলে যায় তার স্ত্রী। আবারো দরিদ্র পিতা আব্দুল আলিম ও তার সৎ মার ঘাড়ে চাপে মানসিক ভারসাম্যহীন মেহেরুল ও তার পুত্রের ভার। কিন্তুু আর্থিক দৈন্যতার কারনে তার তেমন চিকিৎসা করাতে পারেন না আর । এসময় দিন দিন মেহেরুলের আচরণ হয়ে পরে মারমুখী । প্রতিবেশীরা হয় অতিষ্ঠ। এ অবস্হায় বাধ্য হয়ে গত প্রায় এক বছরের অধিক কাল ধরে তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার । শৃংখলিত মেহেরুল প্রসাব পায়খানা করলে নিজের হাতেই পরিস্কার করে তার বাবা ও সৎ মা।
মেহেরুলের পিতা আব্দুল আলিম বলেন, চোখের সামনে আদরের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে কোন পিতা সহ্য করতে পারে ? ডাক্তার বলেছে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা করালে সুস্থ্য হতে পারে। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি তো তার চিকিৎসা ও অন্যান্য ছেলে মেয়ের পিছনে খরচ করে এখন নিঃস্ব। কোথা থেকে আর চিকিৎসা করাবো। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।
মেহেরুলের ছোট ভাই আবু সাঈদ বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাবা আজ নিঃস্ব। উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
মেহেরুলের সৎ মা শাহেরা বেগম বলেন, মেহেরুল সৎ ছেলে হলেও নিজের সন্তানের মতই মানুষ করেছি। কখনও সৎ ছেলে ভাবিনি। শিকলে বাধা সন্তানকে দেখে খুব কস্ট হয় । কিন্ত উপায় নেই । প্রতিদিনই প্রসাব পায়খানা যুক্ত কাপড় পরিস্কার করতেও কষ্ট হলেও যখন ছেলেকে গরু ছাগলের মতো খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখি তখন বুকটা ছিঁড়ে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে মেহেরুল সুস্থ হতে পারতো। এ জন্য সমাজের বিত্তবানরা কেউ সাহায্য করলে আমাদের ছেলেকে সুস্থ করতে পারতাম।
মেহেরুলের প্রতিবেশী অবঃ প্রাপ্ত বিডিআর সদস্য নুর ইসলাম বলেন, ছেলেটির চিকিৎসা করাতেই পরিবারটি এখন নিঃস্ব। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেয়ে তারা ছেলেকে শিঁকলে বেঁধে রেখেছেন । তার সুচিকিৎসার জন্য সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের সহায়তা কামনা করেন তিনি ।

 

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version