পটভূমি: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ৯০ দশকে আসামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নবাদী গোষ্ঠি আলফা বা উলফার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালায়। যার নাম দেওয়া হয় “অপারেশন বজরং”। অপারেশন বজরং অভিযান চলা অবস্থায় উলফার সিংহভাগ নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের সীমান্তসহ ঢাকায় আত্মগোপনে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশের সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থান নেওয়া উলফার সদস্যরা বিএসএফের উপর গেরিলা হামলার মাধ্যমে অস্ত্র, গুলাবারুদ লুটপাটসহ তাদেরকে হত্যা করে। ২০২০ সালে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ঢাকাতে অবস্থান নেওয়া উলফার কেন্দ্রীয় নেতা অনুপচেতিয়া, সিদ্ধার্থ ফুকন, মুনিম নাবিস ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকারের সমর্থনের প্রত্যাশায় ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ কুটনীতি কমি. ডেভিড অস্টিনের সাথে গোপন বৈঠক করেন। উলফার নেতাকর্মীদের বাংলাদেশে অবস্থানের ফলে তৎকালীন প্রয়াত সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাকে (DGFI) অবিশ্বাস ও তীব্র সন্দেহ করে।
দিল্লির বহুদিনের সন্দেহ বাস্তবে রূপ নেয় যখন ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় উলফার মহাসচিব অনুপ চেতিয়া গ্রেফতার হন। কিছুদিন পর নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর ফেরিঘাট হতে কয়েকজন উলফার সদস্যসহ ১০টি একে-৪৭ ও ৮০০ রাউন্ড তাজা গোলাবারুদসহ আইন শৃংখলাবাহিনী আটক করে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী স্থানীয় সাধারণ নাগরিক ও তৎকালীন বিডিআর উলফাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ও মদদ দেওয়ার সন্দেহে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর (বিএসএফ) প্রতি হিংসায় সীমান্ত হত্যার সূত্রপাত ঘটার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তের অভ্যন্তরে ভূমি দখল ও জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণে তৎকালীন বিডিআর প্রতিবাদ করায়, বিডিআর এর টহলরত কয়েকজন সদস্যদের ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিডিআর ২০০১ সালের ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল বেদখল পাদুয়া গ্রাম পুনরুদ্ধার করে সেখানে ৩টি বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোষ্ট) ক্যাম্প স্থাপন করে। তৎকালীন বিডিআর ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে মেঘালয় রাজ্যে বিএসএফ-বিডিআর সমঝোতা আলোচনার মাধ্যমে সময়ের কাল ক্ষেপন করে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভারতীয় বিএসএফ পাদুয়া ঘটনার মাত্র তিনদিন পর ১৮ই এপ্রিল রৌমারী সীমান্তের বড়াই বাড়ীতে বিডিআর এর ক্যাম্প দখলের উদ্দেশ্যে ভারতের সেনাবাহিনী ও বিএসএফের যৌথ সমন্বয়ে সীমান্ত আক্রমন করে। বিএসএফের যৌথ দলের বিরুদ্ধে আক্রমন প্রতিহত করতে ক্যাম্পে উপস্থিত আটজন বিডিআর সদস্যসহ স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়ের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।

বড়াই বাড়ি যুদ্ধে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্বন্ধে তৎকালীন বিডিআর এর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অবঃ) আ.ল.মফজলুর রহমানের বাংলাভিশন টিভির ‘দেশের কথ’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য বড়াই বাড়ি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। তারমধ্যে এক কর্ণেলসহ প্রায় চারশো ভারতীয় সেনা ও বিএসএফ সদস্য নিহত হন। দুজন সদস্যকে জীবিত আটক করে। সেই সাথে ১৮টি সৈন্যের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। বিজয়গাঁথা এ যুদ্ধে তৎকালীন বিডিআর এর তিনজন জোয়ান শাহাদত বরণ করেন এবং বিএসএফের গুলিবর্ষনে স্থানীয় ছয়জন বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশের ১৭৯টি বাড়ী-ঘর ধ্বংসস্থুপে পরিণত হয়। সীমান্তের দুটি ঘটনার ফলশ্রুতিতে ভারতীয় বিএসএফ প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে সীমান্তে বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিকদের দেখামাত্রই গুলি করে হত্যা করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করছে। ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাবেক হাসিনা সরকার তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সহযোগিতা না করায় তারা বাংলাদেশের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সময় কালে সীমান্ত হত্যা বৃদ্ধির একাদিক সংশ্লিষ্টতা লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে বিডিআর হত্যাকান্ডের সময়কালে ২০০৯ সালে ৯৮ জন বাংলাদেশী হত্যা করে। সরকার সমুদ্র নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর জন্য চীনের কাজ থেকে সাবমেরিন ক্রয় সংক্রান্ত আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময়কালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্তে তিন বছরে ১৪৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করে। ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে যথাক্রমে ৭৪ জন, ৩১ জন ও ৩৮ জন। পদ্ম সেতু নির্মানে চীনের সরাসরি অংশগ্রহণে সমঝোতার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময়ে ভারতীয় সীমান্তে ২০১৫ সালে ৩৫ জন ও ২০১৬ সালে ৪৪ জন। এই দুই বছরে মোট ৭৯ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। ২০১৯ সালে ১২ থেকে ১৫ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকের সময়কালে বিএসএফের ডিজি সীমান্ত হত্যাকান্ডকে “অনাকাক্ষিত মৃত্যু” আখ্যায়িত করেন। কিন্তু দুঃখজনকহলেও সত্য যে, বৈঠক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পূর্বেই সীমান্তে একজন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করে। পাঁচ মাস পর (৫ অক্টোবর ২০১৯) তৎকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যান। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারত সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমচুক্তি হয় এবং কিছু চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী বিতর্কিত হওয়ায় শেখ হাসিনা সরকার বাস্তবায়নে সময় নেয়। অসম চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কালে ভারতের বিএসএফ ২০১৯ সালে ৪১ জন ও ২০২০ সালে ৫১ জন বাংলাদেশীকে সীমান্তে হত্যা করে। ২০১৯ সালের ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নির্যাতনের শিকার হন কবিরুল ইসলাম। তার মুখ এবং পায়ুপথে পেট্রোল দেওয়া হয়। এর ১৭ দিন পর ২৭ মে নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে আজিমুদ্দিন নামের এক রাখালের ১০টি আংগুলের নখ তুলে নেয় বিএসএফ। বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের নতুন মাত্রা পাওয়ায় তাঁরকাটা বেড়াসহ বিভিন্ন কারণে বিএসএফ সীমান্তে তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সীমান্তের স্থানীয় মানুষদের উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি করেছে। (সীমান্ত হত্যার তথ্যের সূত্র: অধিকার)
সীমান্তহত্যা: বাংলাদেশ সরকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যগত পার্থক্য থাকলেও বেসরকারি সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারত ৪০৯৭ কিলোমিটার সীমান্তে ২০০৯ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৬ বছরে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এর হাতে ৫৮৮ জন হত্যাসহ ৭৭৩ জন বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিককে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আহত করেছে।
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার প্রধান কারণ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে বিএসএফের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ। দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো ঘন বসতিপূর্ণ। উভয় দেশের বহু মানুষ নদী ভাঙনের কারণে ক্ষেত-খামার ও জীবিকা হারিয়েছে এবং শূণ্য রেখায় অবহেলিত পরিবার গুলোর জীবনমান উন্নয়নে দু্ই দেশের সরকার কার্যকরী ভূমিকা না রাখায় তারা সীমান্তে চোরাচালানে বাধ্য হয়েছে। তারা আন্তঃসীমান্ত গবাদি পশু ও বিভিন্ন পণ্য পাচারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক ক্ষেত্রে চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে অনেককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বা হত্যা করা হয়। পণ্য চোরাচালানের জন্য সীমান্ত অপরাধীরা শিশুদেরকেও ব্যবহার করে থাকে। কারণ, তাদের ধরাপড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে তারাও সীমান্ত হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে থাকে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ হত্যাকান্ড সংঘটিত করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তা বলে না। বেশ কয়েক বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) “ট্রিগার হ্যাপি” নামে একটি প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলায় উল্লেখ করেছে। বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন যে, বিএসএফ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টানা করে বা সতর্ক না করেই নির্বিচারে গুলি চালায়। বিএসএফ আরো দাবী করেছে যে, দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের সদস্যরা গুলি চালায়। তবে কোন অপরাধের সন্দেহে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার ন্যায় সঙ্গত হয় না।
এইচআরডব্লিউ, অধিকার ও এএসকের প্রতিবেদন এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, অপরাধী হিসেবে সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যাক্তি হয় নিরস্ত্র থাকে অথবা তাদের কাছে বড়জোড় কাস্তে, লাঠি, ছুড়ি এবং টর্চলাইট থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পিঠে গুলি করে হত্যা করে। এমন ব্যক্তিদের মোকাবেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি পরিষ্কার।
এইচআরডব্লিউ আরো উল্লেখ করেছে, তদন্ত করা মামলার কোনটিতেই বিএসএফ প্রমাণ করতে পারেনি যে, হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাণঘাতি অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। যার দ্বারা তাদের প্রাণ সংশয় বা গুরুত্বর আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। সুতরাং, বিএসএফ মেরে ফেলার জন্যই গুলি চালানোর দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে মানুষের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করে যা ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সীমান্ত হত্যার মনস্তাত্ত্বিক কারণ: ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশি হত্যায় সীমান্তে আঞ্চলিক ও ধর্ম ভিত্তিক কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্ত এলাকায় দুদেশের শূণ্য রেখায় বসবাসরত মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মের। উল্লেখিত এলাকা দিয়ে প্রায় সিংহভাগ সীমান্ত চোরাচালান হয়ে থাকে। সেই সাথে অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকসহ অনুপ্রবেশের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে এসব এলাকা ব্যবহৃত হয়। এই সীমান্ত এলাকায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সশস্ত্র বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর আধিপত্যে চোরাচালান সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু বিএসএফ তাদেরকে হত্যা, নির্যাতন বা প্রতিহত না করে উল্টো তারা উত্তরবঙ্গ যশোর সীমান্তসহ যেসব সমতল সীমান্তের শূণ্য রেখায় একপাশে মুসলমান অন্যপাশে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করে সেসব এলাকাতে মুসলমানকে টার্গেট করে সীমান্ত হত্যার ৯৯ শতাংশ হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। এতে উদ্বেগের বিষয় যে, বিএসএফ অপরাধ বা বিনা অপরাধে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে হিন্দুত্ববাদ ধারণ ও পোষণ করে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম হত্যার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কিনা তা আন্তর্জাতিক ফোরামের খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
চোরাচালান: বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী ভারতের সাথে ১৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীত বাংলাদেশ ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বিপুল পরিমান বাণিজ্য পার্থক্য থাকার পরও সাবেক হাসিনা সরকার ১১ জুলাই ২০২৩ সালে ভারতের সাথে টাকা ও রূপিতে লেনদেনের অসমচুক্তি করে। টাকা এবং রূপিতে লেনদেনের চুক্তির ফলশ্রুতিতে সীমান্তের চোরাচালানিরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ২০২৩ সালে ভারত থেকে প্রায় সকল সীমান্ত দিয়ে প্রকাশ্যে ব্যাপক হারে চিনি চোরাচালান করে। তারা সকল প্রশাসনের নাকের ডগায় বাংলাদেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে ভারতের চিনি বাজারজাত করে। ভারতের অবৈধ পথে আনা চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য পরিশোধের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার করে। চোলাচালানের সময়কালে বাংলাদেশের নগদ টাকাসহ ডলারের একাধিকবার তারুল্য সংকট দেখা দেয়।এমন চোরাচালানি কাজে সাবেক হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ না থাকলে সম্ভব ছিল না।এখনও সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্ত অংশে চোরাচালান এবং টাকা পাচারসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ভারতে প্রবেশের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ ও সিলেট সীমান্তে একজন সাবেক বিচারপতি, সংসদ সদস্য ও গণমাধ্যমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ স্থানীয় আইন শৃংখলাবাহিনীর কাছে আটক হয়।
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তথ্য অনুযায়ী এক বছরের সীমান্ত চোরাচালানের বিস্তারিত: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ২,১৮৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্য সামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। জব্দকৃত চোরাচালান পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ১৩১ কেজি ৪২৪ গ্রাম স্বর্ণ, ১৩৭ কেজি ২৮৯ গ্রাম রৌপ্য, ২,১৪,৮০৫টি শাড়ি, ২,১০,০৬৩টি থ্রিপিস/লেহেঙ্গা/তৈরী পোশাক, ৩৩,২২,৩৬১টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৭০,১৫,৮২৪ কেজিচিনি, ৫৮,২৭৪ কেজিচাপাতা, ২,৩৫,৪৪৬ কেজি পেঁয়াজ, ৩,৩৮,৪৯৭ কেজি রসুন, ৬৫,২৯৮ কেজি জিরা, ৮৯,৩৬৫ কেজি মাছ, ৪,৩১,৪০৭ কেজি সুপারি, ৪৮,৫৯৮ ঘনফুট কাঠ, ৬,০৫৩ ঘনফুট পাথর, ৭,৩৭,১৮০ কেজি কয়লা, ৬১,১৪৪টি ইমিটেশন গহনা, ১৭টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৪ কেজি ৮১ গ্রাম সাপের বিষ, ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম তিমির বমি (অ্যাম্বারগ্রিস), ৩৩,১৩২ কেজি কারেন্ট জাল, ১২,৬৭,১৪৮ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ২৫,৬২৪ কেজি সার, ১২,২৬২ লিটার ডিজেল/পেট্রোল/অকটেন, ৯,৯০৭টি মোবাইল, ১,০০,০০৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৩,৬০,২৮৮ পিস চশমা, ১০,৩২,০৯৪ পিস চকলেট, ২,৭৮,২৫৩ প্যাকেট বিস্কুট, ২,১৮০ প্যাকেট কীটনাশক, ৩৮ কেজি ৪০০ গ্রাম কচ্ছপের হাড়, ২,৫১,৬৪,৫০৭ পিস আতশ বাজী, ২০৭টি ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান, ৮টি বাস, ৪৭টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯১টি পিকআপ, ৩৮৩টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৮৭৩টি মোটরসাইকেল এবং ২৩৫টি বাই-সাইকেল।
একই সময়কালে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩৮টি পিস্তল, ৫টি এসএমজি, ১৮টি গ্রেনেড, ৮টি রাইফেল, ৬টি রিভলভার, ৫২টি সকল প্রকার গান, ৮,৮৫৯ গোলা বারুদ, ৪৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি মর্টার শেল, ৪১টি ককটেল, ১০.৪৪ কেজি গান পাউডার, এবং ২৩৩টি ব্ল্যাংক কার্টিজ।
গত বছর বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। এ সময়ে ৯২,১৬,৮৭৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮৪ কেজি ৭৯১ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৩১ কেজি আফিম, ২,১৪,০২৮ বোতল ফেনসিডিল, ২,৩৯,৩৭২ বোতল বিদেশী মদ, ৭,৭৭৯ লিটার বাংলা মদ, ১,৮৪,২৮০টি মদ তৈরির ট্যাবলেট, ১৩,২৬৬ ক্যান বিয়ার, ১৫,৭৮২ কেজি গাঁজা, ২৬৪ কেজি ৮৪ গ্রাম হেরোইন, ৬,০২৪ কেজি ৩৫৩ গ্রাম কোকেন, ১৪৭ বোতল এলএসডি, ৮৯,০৭,৩৪৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রাট্যাবলেট, ৩৬,১৭৩টি ইস্কাফ সিরাপ, ১১১,১০,৫৪৮টি বিভিন্ন প্রকার ঔষধ, ১২,৫১০ বোতল এমকেডিল/কফিডিল, ১২,৭৩,৪১২টি নেশা জাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন এবং ৫৭,৭০,৭৫৭টি অন্যান্য ট্যাবলেটজব্দ করা হয়েছে।
২০২৪ সালে সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২,০৮৮ জনকে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ২,৬৭৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক, ১৫৫জন ভারতীয় নাগরিক অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছে।
তাঁরকাটার বেড়া: অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে ১৯৮৫ সালে ভারতের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীবগান্ধী সরকার বাংলাদেশ সীমান্তে তাঁরকাটার বেড়া নির্মান শুরু করে যা এখনও চলমান। বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের ৪০৯৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৩১০০ কিলোমিটারের বেশি বেড়া নির্মান করেছে। তাঁরকাটার বেড়া নির্মাণে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ না হয়ে উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়রাজ্য ও বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতির গভীর মিলবন্ধন রয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় দুদেশের পরিবার স্থানান্তর এবং ১৯৭১ সালে ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী এলাকাতে থেকে যাওয়া শরণার্থীর বাস্তবতা দুদেশের অনুধাবন করা উচিত ছিল। সেই সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূণ্য রেখায় কৃষি জমি চাষাবাদ ও নদী ব্যবহারে হত্যা-নির্যাতন বড় একটি কারণ। বেড়া নির্মানের পূর্বে তিন প্রজন্মের রক্তের আত্মীয়তা সম্পর্কের পরিবারগুলোর যোগাযোগের ব্যবস্থা করে তাঁরকাটার বেড়া নির্মাণ করা উচিত ছিল। বর্তমানে কাটা তাঁরের বেড়া একটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বিবিসির তথ্য মতে ২০২২ হতে ২০২৩ সালে ভারতে ১০৬৪ জন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ করেছে, তার মধ্যে হিন্দু ৩১৭ জন এবং মুসলমান ৭৪৭ জন। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী তারা ২০২৪ সালে ভারতের ১৫৫ জন নাগরিক আটক করে। ভারতের বুঝা উচিত একই সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে তাঁরকাটার বেড়া অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান ঠেকাতে পৃথিবীতে একটি জটিল চ্যালেঞ্জ।

সীমান্ত জটিলতার চিত্র: ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত হত্যা, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের সমাধানে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা-
(১) | সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, বিএসএফ ও দুদেশের স্থানীয় নির্বাহী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি জুডিশিয়াল সীমান্ত আদালত গঠন। |
(২) | সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ব স্ব সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে প্রকাশ্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকরী নির্দেশনা থাকতে হবে। |
(৩) | বর্ডার হাট সমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দুদেশের স্থানীয় চাহিদা মাফিক পণ্যের সঠিক সমতা ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থা তৈরী করতে হবে। |
(৪) | দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূণ্য রেখার মধ্যে কৃষি জমি চাষাবাদ আন্ত:সীমান্ত নদী ব্যবহারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয়ভূমিকা রাখতে হবে। |
(৫) | ভারতের অভ্যন্তরে মাদক চাষাবাদ ও উৎপাদন রোধে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করতে হবে। |
(৬) | দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী শূণ্য রেখায় বসবাস করা বেসামরিক স্থানীয় নাগরিকদের শিক্ষা, ধর্মীয় মূূল্যবোধ, সচেতনতার কর্মশালা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি ও শূণ্য রেখার ভূমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে সর্বাত্তক সহযোগিতাসহ স্থানীয়দের সাথে বিশ্বাস ও আস্থার সু-সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। |
সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান: সীমান্ত আদালতের মাধ্যমে উভয় দেশের জুডিশিয়াল বডি থাকলে অনুপ্রবেশসহ সীমান্তের বিভিন্ন অপরাধের তাৎক্ষনিক বিচার কার্যের মাধ্যমে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে আটক ব্যক্তিবর্গের দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় দুইদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে আটক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে হস্তান্তর করায় প্রচলিত আইনে বিচারক র তেবা মুক্তি পেতে কাগজের জটিলতায় ভারতে কারাগারে ১০৬৪ জন বাংলাদেশের কারাগারে ১৫৭ জন বিনা অপরাধে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যেমন নেত্রকোনা কারাগারে মইনুল ইসলাম নামের এক ভারতীয় নাগরিকের সাজা শেষ হওয়ার পরেও ২০২২ সাল থেকে শুধু কাগজের জটিলকায় জেল হাজতে আটক আছে। তারা নাগরিক অধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফোরামের উচিত একটি নিরপেক্ষ সীমান্ত আদালত গঠনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। উভয় দেশের নাগরিক অন্যায়ের শিকার হলে ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে অভিযোগ জমা দিবে। উক্ত সীমান্ত জুডিশিয়াল আদালতটি হবে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সীমান্তের নাগরিক অধিকারের আইন কাঠামোর মধ্যে।
জুডিশিয়াল সীমান্ত আদালতের প্রয়োজনীয়তা: কুড়িগ্রাম সীমান্তে ১০ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করে প্রাণহীন দেহটি তাঁরকাটার বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও ন্যায়বিচারের দাবী থাকলেও প্রধান আসামী বিএসএফের সদস্য অমির ঘোষসহ তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিএসএফের নিজস্ব আদালতে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হন। রায়পূর্ণ বিবেচনা করেও এ কি আদালত পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশনা থাকলেও আমলে নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের সরকার পর্যায়ে একাধিকবার সীমান্ত হত্যা বন্ধে উভয়পক্ষ আশ্বস্থ করে। সেইসাথে বিজিবি এবং বিএসএফের ডিজি পর্যায়েও ৫৪ বার সংলাপের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সমঝোতা চুক্তি হলেও দিল্লির কম গুরুত্বের কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নেত্রকোনা সীমান্তের বিজয়পুর (বিওপি) বিজিপির সদস্য সাদ্দাম হোসেন চোরাচালান পণ্য পাচারের প্রলোভন দেখিয়ে ২০২৩ সালে উপজাতি এক নারীকে ধর্ষণ করে। এরপর উক্ত অপরাধে তাকে বাহিনীর আইনে চাকুরীচ্যুত করা হয়। একই জেলার বারমারী (বিওপি) ক্যাম্পের কতিপয় বিজিবি সদস্য আমিনুল নামের স্থানীয় এক চোরাকারবারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ২০২৩ সালে গুলি করে হত্যা করে। দুটি ঘটনাই বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচার করায় ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছে।
দুই দেশের সরকারের সীমান্তে হত্যা কান্ডের দায় মুক্তির কোন সুনির্দিষ্ট অনুমোদন না থাকলেও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিএসএফ ও বিজিবিকে ফৌজদারি কার্যবিধির বাইরে রাখা হয়। এমন জবাবদিহিতার বাইরে থাকায় সীমান্ত হত্যার ঘটনাগুলো উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সীমান্তে বিএসএফ গুলি কিংবা নির্যাতনে ক্রমাগত বাংলাদেশি হত্যাকরছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন হলেও চীন বা নেপাল সীমান্তে তা অসম্ভব। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর ও বর্তমানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নয়াদিল্লির নীতি নির্ধারকদের উচিৎ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুসরণ করে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
লেখক: লুৎফর জামান ফকির
গণমাধ্যম কর্মী ও সাবেক সেনা সদস্য
মোবাইল নং- ০১৭৩৯৯৩৩৩৮২
ই-মেইল: lutforarticale@gmail.com
ফেসবুক আইডি: ডিটেকটিভ আর্টিকেল