জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য দেশ থেকে লেজ গুঁটিয়ে পালিয়ে গেছেন। আত্মীয়-স্বজনদের সেইফ এক্সিট দিয়েছেন। হাসিনা নিজে এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি। দলীয় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চিন্তা করেননি। তৃণমূলদের বিচারের মুখোমুখি রেখে তিনি পালিয়েছেন। দেশের যারা নেতাকর্মী রয়েছে তাদের তিনি টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছেন।’
রবিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘পনেরো-ষোলো বছরে যখন আপনাদের কঠিন সময় ছিল কোনো নেতাকে পেয়েছেন আর কোনো নেতা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থেকে কিংবা দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমন অনেক নেতাকর্মী ছিল যাদের বিগত ১৬ বছরে খুঁজে পাননি। তারা এখন নতুন করে বিভিন্ন রূপে এই বাংলাদেশে এসেছে। তারা এখন আপনাদের মাথায় হাত ভুলাচ্ছে। যাদের আপনাদের কঠিন সময়ে পাশে পাননি, অনুরোধ করি এখন সুবিধাজনক সময়ে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো এই অমানুষিকতা দেখাবেন না। যদি দেখান তাহলে হাসিনা যেভাবে নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়েছে, আপনাদের অবস্থাও একই হবে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম যিনি এই অভ্যুত্থানের ঘোষক, তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেনো পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য আমাদের নাহিদ ইসলাম যেনো ওই ক্ষমতার মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাঁতারে এসে দাঁড়ান। আমরা বিশ্বাস করি যাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ে জনতা আগে ছিল তারা জনতার ডাকে যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো ক্ষমতার পথ ছেড়ে আবার জনতার কাঁতারে আসতে পারে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সকলকে একসাথে রেখে বাংলাদেশে আবার নতুন একটি দল করতে চাচ্ছি। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা, যারা এসব চর্চা করে এসেছে তাদের রক্তে ঐ চর্চা একদম মিশে গেছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে যারা এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া মানে কেন্দ্রীয় কয়েকজন না, এই সোনারগাঁসহ সারাদেশের মানুষ। সারা বাংলাদেশে অভ্যুত্থানে যারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদেরকেই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামনে থাকতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও শাকিল সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সোনারগাঁয়ের শহীদ মেহেদীর বাবা ছানাউল্লাহ, শহীদ ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার ও আন্দোলনে নির্যাতিত ছাত্র শাকিল আহমেদ।