মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
ঘড়ির কাটায় দুপুর ১টা। কটিয়াদী সরকারি কলেজ চত্বরে মেতে ছিলাম চায়ের আড্ডায়। হঠাৎই কানে ভেসে এলো একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি।চোখ তুলে তাকাতেই দৃষ্টিগোচর হলো পায়ে হেটে চলেছে এক মধ্যবয়সী লোক।
যার সাইকেলের হাতল ও পেছনের সিটে থরে থরে সাজানো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। লোকটির সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল তিনি কটিয়াদী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের নৈশ্যপ্রহরি আব্দুল কাদির। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ফেরি করে পতাকা বিক্রি করছেন উপজেলার অলিগলি ও পথে প্রান্তরে। তিনি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাট-বাজারে পতাকা বিক্রি করে থাকেন। অন্য অনেক পেশার সুযোগ থাকলেও দেশ প্রেমের টানেই তার এই পেশাকে বেছে নেওয়া বলে জানান তিনি।
প্রায় ৫০ বছর বয়সী আঃ কাদিরের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা কমলপুর গ্রামে। বর্তমানে কটিয়াদী পূর্বপাড়া বসবাস করেন। তার বাড়িতে স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অভাবের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পতাকা বিক্রয়ের অর্থ দিয়েই চলে তার সংসার। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তিনি পতাকা বিক্রি করতে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসেছেন কটিয়াদী সরকারি কলেজ ও কটিয়াদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চত্বরে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সাইকেলে চড়ে পতাকা বিক্রি করছেন। পতাকা কিনতে তার পাশে ভিড় করছেন অনেকেই। তিন ধরনের পতাকা রয়েছে তার কাছে। ছোট পতাকা ১০ টাকা, মাঝারি ধরনের ২০ টাকা আর একটু বড় সাইজের টার দাম ৫০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে জাতীয় পতাকা সম্বলিত মাথায় বাধার বেল্ড,ছোট হাতের জাতীয় পতাকা,কাগজের পতাকা এবং গালে ও কপালে আটকানো স্টিকার।
দেশের প্রতি রয়েছে তার অসীম ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার জন্যই ব্যবসা খুব একটা ভালো না হলেও শুধু পতাকার রং এ রঞ্জিত লাল-সবুজ কেন্দ্রীক সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন তিনি। এদিকে, পতাকা ক্রেতা কম থাকায় বিপাকে পড়েন। আঃ কাদির ভোরের আকাশকে বলেন, আমাকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেই সংসার চালানো বড় হিমশিম খেতে হয়। তাই সকাল ৯ -৪টায় অফিস করেন আর বাকি সময় পতাকা বিক্রি করেন এবং ছুটির দিন সারাদিন বিক্রি করে থাকেন। আশানুরুপ পতাকা বিক্রয় করতে না পেরে বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন।
এসময় আক্ষেপ প্রকাশ করে আঃ কাদির দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, মাঝে মধ্যে অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে টাকা ছাড়াই পতাকা নিতে আসে। অনেককেই ফ্রিতে দিই। কিন্তু সংসার চালানোর তাগিদে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়না। সরকার যদি আমাকে সহায়তা করে সকল শিশুর মাঝে জাতীয় পতাকা বিতরণ করে স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দিব।
কটিয়াদী পৌর এলাকার বাসিন্ধা জানান, ভাষার মাস,স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাস শুরু হলেই জাতীয় পতাকা নিয়ে পথে পথে ঘোরেন। তিনি আয় করার জন্য এটা করেন না। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ থেকে তিনি এটি করেন। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এমন আবেগ তিনি খুব কম মানুষের মধ্যে দেখেছেন।