বিপ্লব হোসেন, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে( ইবি) অবস্থানরত ইবি থানা স্থানান্তর না করার দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
আন্দোলনরত এলাকাবাসী কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক প্রায় ২ঘন্টা অবরোধে করেন ও রাস্তায় আগুন জ্বালায়।এতে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ।
ইবি শাখা শিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত ফ্যাসিস্ট সরকার এই থানাকে স্থানান্তরিত করতে চেয়ে ছিল। তাদের সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া। ফ্যাসিস্টদের নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত ইবির শিক্ষার্থীরা কখনো মেনে নিবে না। যদি ঝাউদিয়ার মানুষের জন্য থানা প্রয়োজন হয় তাহলে তাদের জন্য আলাদা থানা নির্মাণ করেন। কিন্তু ইবি থানাকে স্থানান্তরিত করা যাবে না। ইবি থানা ইবিতেই থাক, ইবি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা পাক।’
ইবি শাখা ছাত্রদল আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ইবি থানা ইবিতেই থাকবে। খুনি হাসিনার দোসররা ঝাউদিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বসে আছে। ঝাউদিয়াতে আপনারা আপনাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আলাদা থানা স্থাপন করার জন্য দাবি করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই থাকবে। এখানে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী আছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে প্রত্যেকের নিরাপত্তার জন্য ইবি থানা ইবিতেই থাকবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার সরকার ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ইবি থানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর কোনো মতামত নেয় নি। সকলের মতামত উপেক্ষা করেই ফ্যাসিস্ট সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা ইবি থানা অন্য কোথাও স্থানান্তরে ষড়যন্ত্র মেনে নিবো না। আমরা প্রয়োজনে আরো কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করবো।’
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহমুদুল বলেন, ‘ইবি থানা দীর্ঘ ২৬ বছর আগে ইবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও দ্রুত আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হযেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চক্র ইবি থানাকে স্থানান্তরিত করার চক্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী এই সিদ্ধান্তকে রুখে দিবো। ইবি থানা এখান থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ঝাউদিয়ায় নিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। বর্তমান সরকার যদি ইবি থানা স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তকে রুখে দিবো।’
ইবি থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. তৌহিদুল হাসান লাবু বলেন, “শহীদ জিয়ার গড়া আমাদের গৌরবময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতেই এখানে প্রতিষ্ঠিত দীর্ঘদিনের পুলিশি থানা সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিল পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকার। ইবি থানা ইবিতেই থাকবে, অন্য কোথাও এই থানা স্থানান্তর করা যাবে না।”
পরে বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে, কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘থানা স্থানান্তর সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত এর ফলাফল জানা যাবে। তদন্ত কমিটি ইবি ও স্থানীয় জনগণদের আন্দোলনের বিষয় বিবেচনা করে সুবিধাজনক স্থানেই থানা স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে।’
এদিকে প্রধান ফটকে আন্দোলনরত জনগণ ও শিক্ষার্থীরা পুলিশ সুপারকে আগামী ১৬ তারিখের মধ্যে ইবি থানা ইবিতে না থাকলে লাগাতার অবরোধের হুঁশিয়ার দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলা ও ঝিনাইদহ জেলার মাঝামাঝি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবার পরে, ঠিকানা জটিলতার প্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে ইবি থানা স্থাপন করা হয়। এর আগে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইবি থানা ঝাউদিয়ায় স্থানান্তরের দাবিতে কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া বাজার এলাকায় সড়কে অবরোধ করে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী।