বিশেষ সংবাদদাতা
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩৬৮৭ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তানদের ভুয়া উদ্যোক্তা পরিচালক দেখিয়ে কোম্পানির বোর্ড পরিচালনা করেন এবং পলিসি ফান্ডসহ বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
**তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য**
একনাবিন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টসের তদন্তে উঠে এসেছে যে, মঞ্জুরুর রহমান তার স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, ছেলে জিয়াদ রহমান এবং মেয়েরা আদিবা, আনিকা ও সাইকা রহমানকে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে দেখালেও তারা আসলে কোনো বিনিয়োগকারী ছিলেন না। অথচ এই সময়ে কোম্পানির ফান্ড থেকে বড় অঙ্কের টাকা তাদের নামে স্থানান্তরিত হয়েছে।
**আইডিআরএ ও দুদকের তদন্ত**
ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) প্রথমে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে, পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করে। একাধিক চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ফার্মের প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিললেও কিছু অসঙ্গতি দেখা গেছে, যা পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
**আইনি লড়াই ও বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি**
বনানী থানায় ২৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ৩৩ নম্বর মামলা দায়ের করা হয়, যা দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১১৪ ধারায় রেকর্ডভুক্ত হয়। মামলাটি জামিনযোগ্য নয় বলে দাবি করা হলেও আসামিরা নানা কৌশলে এর শুনানি বিলম্বিত করে যাচ্ছেন। কখনো জামিন আবেদন জমা দিয়ে, আবার তা প্রত্যাহার করে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
**বর্তমান অবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা**
আসামিরা ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত জামিনে রয়েছেন এবং মামলাটি সিএমএম কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অদৃশ্য প্রভাবের কারণে মামলাটি কার্যকরভাবে এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
ডেল্টা লাইফের এই দুর্নীতির ঘটনায় দেশের আর্থিক খাত বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত না হলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
** আসামিদের অবস্থান ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা**
ডেল্টা লাইফের ৩৬৮৭ কোটি টাকার দুর্নীতির মূল হোতা মঞ্জুরুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা জামিন না পেলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। জানা গেছে, তার মেয়ে সাইকা রহমান কখনও জামিন পাননি এবং বর্তমানে পলাতক। পুরো পরিবার সিএমএম কোর্টে জামিন না পেয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষ আদালতে আবেদন করেছে যে, আসামিরা হাইকোর্ট বিভাগের ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রদত্ত আগাম জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এ কারণে ১, ২, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর আসামিরা বর্তমানে জামিনে নেই বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
**বিচারকের নির্দেশনা**
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, আসামিদের জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে শুনানির জন্য নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দুর্নীতির এই মামলায় দ্রুত বিচার না হয়, তবে দেশের আর্থিক খাতে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
**সূত্র:** বনানী থানার মামলা নং ৩৩ (১১) ২০২৪