নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামে স্বামীর অধিকার আদায়ের দাবিতে পাঁচ দিন ধরে স্বামীর বাড়িতে অনশন করছেন মদিনা আক্তার (২৮)। বিয়ের পাঁচ বছর পরও নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার স্বামী তামিম তাকে তালাক দেওয়ার পর থেকেই তিনি এই প্রতিবাদী অবস্থান নিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে হয় মদিনা আক্তারের সঙ্গে বড়কান্দা গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে তামিমের। বিয়ের পর থেকেই তামিম শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন এবং মদিনা তার স্বামীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতেন। মদিনার পরিবারে আর কোনো ওয়ারিশ না থাকায় তিনি তামিমকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে চলছিলেন। মদিনা তার নিজের উপার্জন ও সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তামিমকে সহযোগিতা করতেন।
হঠাৎ গত ১৫ জানুয়ারি রাতে তামিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে মদিনাকে রেখে চলে যান। পরদিন সকালে মদিনা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্বামীকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর জানতে পারেন, তামিম তাকে তালাক দিয়েছেন। মদিনা এর প্রতিক্রিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে এসে অধিকার আদায়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন। পাঁচ দিন ধরে তিনি শ্বশুরবাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। কিন্তু পরিবারের কেউ তার খোঁজ নেয়নি বা তাকে খেতে দেয়নি। আত্মীয়স্বজনের দেওয়া সামান্য খাবার খেয়েই দিন পার করছেন তিনি।
গ্রামের মাতব্বর ইদ্রিছ মিয়া বলেন, “এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মদিনা দীর্ঘদিন ধরে অনশন করছে, যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
সাবেক মেম্বারও ঘটনাটিকে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করে বলেন, “আমি প্রশাসনের কাছে দ্রুত এ ঘটনার সুরাহা চাই। এভাবে কাউকে কষ্টে রাখা মানা যায় না।”
মদিনার শ্বশুর মোতালেব মিয়া বলেন, “আমি এই বিয়ে মেনে নিতে পারছি না। তামিম মদিনাকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকত, কিন্তু এখন তারা যা করেছে তার জন্য আমার বাড়িতে জায়গা নেই। সে মরে গেলেও আমাদের কিছু আসে যায় না।”
নওপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কাওছার বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনে মদিনাকে একদিন গিয়ে দেখে এসেছি। পরিস্থিতির সমাধানের চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।”
মদিনার এই অনশন ও অধিকার আদায়ের লড়াই স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে এখনও এ সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং আইনানুগ পদক্ষেপ ছাড়া এই টানাপোড়েনের অবসান সম্ভব নয়। মদিনা আক্তারের জীবন এখন বিপন্ন। তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন।