আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ:
নওগাঁর মহাদেবপুরে দাবি করা চাঁদা না পেয়ে ভোগদখলীয় জমি দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। সম্প্রতি ভোগদখলীয় ওই সম্পত্তি কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্টা করে চক্রটি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি থানা-পুলিশ ও নওগাঁয় দায়িত্বরত সেনাবাহিনী ইউনিটকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের পাটকাঠী শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমরুল হাসান (মামুন), তাঁর ভাই খোরশেদ আলম (পিন্টু) ও আব্দুল আজিজ লোকজন নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর পৈত্রিক সূত্রে ও ক্রয় সূত্রে পাওয়া চক হরিবল্লভ মৌজায় জাকির হোসেনের বসতবাড়ী সংলগ্ন ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে মাপযোগ করতে থাকে।
আব্দুল আজিজ ও তাঁর পরিবারের লোকজন বাধা দিতে গেলে ইমরুল হাসান ও তাঁর ভাই খোরশেদ আলম তাঁদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে ৪ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে ইমরুল হাসান ও খোরশেদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী লোকজন জাকির হোসেনের সম্পত্তি তারকাঁটার বেড়া দিয়ে দখল করে নেয়। বসতবাড়ীর সামনে তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইমরুল হাসান ও তাঁর ভাই খোরশেদ নিজেদের ওই জমির মালিক বলে দাবি করেন। তারা জাকির হোসেনের কাছ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং চাঁদা না দিলে তাঁকে মেরে লাশ গুমকরাসহ বসতবাড়ী থেকে বেদখল করার হুমকি দেন।
বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে ইমরুল হাসান ও খোরশেদ সেখান থেকে চলে যায়। এর আগে ২০২১ সালের ১৩ মে ইমরুল হাসান ও খোরশেদ জাকির হোসেন ও তাঁর ভাই মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং চাঁদা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তখন এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জাকির হোসেন।
জমির মালিক জাকির হোসেন বলেন, আবার বাবা মৃত হারুন মিঞা ও আমি মহাদেবপুরের চকহরিবল্লভ মৌজায় স্থানীয় আজিজার রহমান, সামছুদ্দীন, আব্দুল আজিজ ও আলমগীরের কাছ থেকে ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে বিভিন্ন রেজেস্ট্রি দলিল মূলে ২ একর সম্পত্তি ক্রয় করি। ক্রয় সূত্রে মালিকানাধীন ওই সম্পত্তি পাকা বসতবাড়ী, ইটভাটা ও বাগান করে প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি ও আমার ভাই-বোনেরা ভোগদখল করে আসছি। ইমরুল হাসান ও খোরশেদ আলম আমাদের ২ একর সম্পত্তির মধ্য থেকে ১৪ শতাংশ জমির মালিক দাবি করে আসছে সত্য নয়। তাঁদের দাবি, তাঁদের ফুফু আমেনা বেগম নাকি ১৪ শতাংশ জমি নাকি তাঁদের নামে রেজেস্ট্রি দলিল করে দিয়ে গেছেন।
প্রকৃতপক্ষে আমেনা বেগম তাঁর অংশের সম্পত্তি ১৯৭৮ সালে মোজাম্মেল হক সরদার নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। জাকির হোসেনের ভাই মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ইমরুল হাসান ও খোরশেদ আলম চকহরিবল্লভ মৌজায় আমার বসতবাড়ি ও ইটভাটায় কোনো সম্পত্তি পাবেন না।
একটা জাল দলিল করে চাঁদা নেওয়ার জন্য তাঁরা আমাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা করছে। জমি তাঁদের হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তা দখলে নিচ্ছে না কেন? চাঁদা দাবির মতো বেআইনি পথ ধরছে কেন? আমরা এই জমি ৪০ বছর ধরে ভোগদখল করছি। এখন কেউ একটা কাগজ নিয়ে এসে দাবি করবে আর ছেড়ে দেব এটা হয় না। অবশ্যই সেটা আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে। সেনাবাহিনীর দল এখানে তদন্তে এসে তাঁদেরকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমি বুঝে নিতে বলেছেন।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরুল হাসান মামুন বলেন, ‘আমার ফুফু আমেনা বেগম তাঁর ভাগের ১৪ শতাংশ আমাকে ও আমার ভাইকে লিখে দিয়েছেন।
সেই ১৪ জমি জাকির ও তাঁর ভাইয়েরা জোর করে দখল করে আছে। আমরা আমাদের জমি বুঝে নিয়ে তারকাঁটার বেড়া দিয়েছিলাম। কিন্তু জাকির ও তাঁর ভাইয়েরা সেই বেড়া উঠিয়ে ফেলেছে। আর চাঁদা দাবির অভিযোগ সত্য নয়। আমাদেরকে ঘায়েল করার জন্য তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাশমত আলী বলেন, ‘জমিজমার বিরোধ নিয়ে উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উভয়পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে করে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কোনো ঘটনা না ঘটে। একজনের দখলীয় সম্পত্তি দাবি করলে অবশ্যই সেটা আইনি প্রক্রিয়ায় করতে হবে। কোনো পক্ষে আদালতের আদেশ থাকলে অবশ্যই পুলিশ সেখানে সহযোগিতা করবে।