যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপের প্রভাব সেখানে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ওপরও পড়তে পারে।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান শুরু হয়েছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। সুতরাং বাংলাদেশিরা রেহাই পাবে, এমনটা আমাদের আশা করা ঠিক হবে না।’
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজেস ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রধান কবির বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের পরিকল্পনা করেছে, যার ফলে অনেক লোককে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, এমন অনেক শিশু আছে, যাদের বাবা-মা সফরকালে বা অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে সেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল, অর্থাৎ সেসব শিশু জন্মসূত্রে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় তারা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে। তবে নীতিটি আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
বিইআই প্রধান বলেন, ‘আমার ধারণা, যারা যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকদের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বলবে।’সাবেক কূটনীতিক আরও বলেন, তার জানা মতে, ১৬০টি দেশের বহু লোক যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এবং গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের ১৮ হাজার নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।
আরেকজন বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ট্রাম্প মূলত দক্ষিণ আমেরিকান অভিবাসীদের লক্ষ্য করে একটি কঠোর অভিবাসন নীতি তৈরি করেছেন। কিন্তু যেহেতু নীতিটিতে নির্দিষ্ট কোনো দেশের কথা বলা হয়নি, তাই এটির প্রভাব বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের ওপরও পড়বে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমেরিকান ডেস্কের মহাপরিচালক হিসাবে পূর্বে দায়িত্ব পালনকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, আগের মেয়াদে ট্রাম্প অভিবাসন বিরোধী নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদে এটি আরও কঠোর হবে, যা তার অভিষেক ভাষণ থেকেই বোঝা গেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, তবে নতুন নীতি একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা সহজ করে দিতে পারে।অনানুষ্ঠানিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন এবং তাদের এক দশমাংশ অনথিভুক্ত।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইউএস আইসিটি বিশেষজ্ঞ আফজাল হোসেন বলেছেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সুপার পাওয়ার দেশটি অবদান রাখতে সক্ষম সাড়া বিশ্বের শীর্ষ মেধা ও প্রতিভাকে বরাবরই স্বাগত জানিয়ে আসছে। তার মতে, ট্রাম্পও সেই নীতি থেকে বিচ্যুত হবেন না। তবে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় নতুন প্রশাসন অন্যদের তাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে।
রাষ্ট্রদূত কবির এ প্রসঙ্গে আফজাল হোসেনের সঙ্গে একই অভিমত প্রকাশ করেন, ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করা যুবকদের স্বীকৃতি দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা অনেক উদ্বিগ্ন অভিবাসীকে আরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের অনেককে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দৃশ্যত আটক করেছে।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসন ইস্যু ছিল অন্যতম।