স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ, তেভাগা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ,বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সভাপতি বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অমল সেন- এর ২২ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি ১৭ জানুয়ারি – ১৬জানুয়ারি -২০২৫ রোজ বৃহস্পতি থেকে ১৮ জানুয়ারি শনিবার ৩ দিন ব্যাপি স্মরণ সভা, মেলা,বিভিন্ন প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাঁরই নিজের প্রতিষ্ঠিত বাকড়ী উচ্চ বিদ্যালয়- এগারো খান,নড়াইল- যশোর মাঠ প্রাঙ্গনে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় কমরেড অমল সেনের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে কর্মসূচী শুরু হয়। অমল স্মৃতিরক্ষা কমিটির শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ সদস্য সচিব বিপুল বিশ্বাস , সহ-সভাপতি কঙ্কন পাঠক।
বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, কমরেড নাজিমউদ্দীন, কমরেড তসলিম উর রহমান, কমরেড জিল্লুর রহমান ভিটু, কমরেড প্রফেসর ইসরারুল হক । বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা কমিটির পক্ষে কমরেড তসলিম উর রহমান, কমরেড জিল্লুর রহমান ভিটু, কমরেড মিজানুর রহমান, কমরেড বিপুল বিশ্বাস।
জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির মিজানুর রহমান, বিপুল বিশ্বাস, সাহবুদ্দিন বাটুল, ইরাদাদ নয়ন, আজাদ হোসান। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ নাজিমউদ্দীন, হাবিবুর রহমান মোহন। নারী মুক্তি পরিষদের বীথিকা বিশ্বাস, ভারতী বিশ্বাস। বিপ্লবী যুব মৈত্রীর শেখ আলাউদ্দিন, আহাদ আলী মুন্না, মন্জুরুল আলম, হুমায়ুন কবির সেতু। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিপ্লব বিশ্বাস, অমল বিশ্বাস।
এসময় বাকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা গার্ড অফ অনার জানায়। রেড স্যালুট জানায় পার্টির স্বেচ্ছাসেবক দল। দুপুর ৩ টায় সরলা সিং মঞ্চে ” বৈষম্য হীন সমতার সমাজ ” এক আলোচনা সভা কমরেড কঙ্কন পাঠকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় অংশ নেন কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, প্রফেসর ইসরারুল হক, অধ্যাপক মফিজুর রহমান রুন্নু, কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, কমরেড জিল্লুর রহমান ভিটু, রণজিৎ বাওয়ালী, ছাত্র নেতা রাশেদ খান, স্বপ্না সুলতানা, মিজানুর রহমান, মন্জুরুল আলম, ঘন শ্যাম মজুমদার প্রমুখ।
গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন কমরেড বিপুল বিশ্বাস। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ৩ দিন ব্যাপী স্মরণ মেলায় আলোচনা সভা, শিশু কিশোর মেয়ে-নারীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, সাইকেল রেসলিং, চেয়ার সিটিং প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কমরেড অমল সেন ১৯১৩ সালের ১৯ জুলাই নড়াইলের আফরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জিতেন্দ্র নাথ সেন।
কমরেড অমল সেন তাঁর কৈশোর জীবনেই বিপ্লবের দীক্ষা গ্রহন করেন। যখন তিনি ৯ম শ্রেণীর ছাত্র তখনই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বিপ্লবী অনুশীলন গ্রুপের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে খুলনা বিএল কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন।
১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই সময় তিনি উপলব্ধি করেন ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ী হতে হলে ব্যাপক কৃষক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অমল সেনের দৃঢ় অবস্থান ছিল আজীবন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান আমলের ১৯ বছরই তাকে রাজবন্দী হিসাবে জেলে কাটাতে হয়। শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নও কম সহ্য করতে হয়নি।১৯৮০ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হলে তিনি দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
‘ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও জনগনের বিকল্প শক্তি’ তাঁর প্রকাশিত একটি গ্রন্থ। উল্লেখ্য কমরেড অমল সেন ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দুপুরে মৃত্যু বরণ করেন।১৭ জানুয়ারি তাঁর মরাদেহ যশোর হয়ে বাকড়ীতে এনে সমাধিস্থ করা হয়।