রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় কলেজছাত্র ইমাম হাসান তাইমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তানজিল আহমেদকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। এ ছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে শরীরে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যা করা হয়। হত্যা মামলায় পুলিশের কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেনকেও (২২) ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) দায়ের করা অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে হাজির করার আবেদনের ওপর ট্রাইব্যুনালে শুনানি হবে বলে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ।
এর আগে, গত ২০ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদের আদালতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার অভিযোগে ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর মা মোসা. পারভীন আক্তার এই মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম, এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ও এসআই শাহাদাৎ আলী।
বাদীর অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা খেতে যান। তখন কিছু ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কারের বিক্ষোভ করছিলেন। সে সময় ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি চালায়। প্রাণভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করতে থাকেন। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা স্টোরের ভেতর ঢুকে দোকানের শাটার টেনে দেন। কিন্তু শাটারের নিচের দিকে আধা হাত খোলা ছিল। সেখান থেকে পুলিশ তাদেরকে টেনে বের করে। জাকির হোসেন গুলি থেকে বাঁচতে চাইলে দৌড় দিতে বলে। তখন তাইম সবার আগে দৌড় দেন। জাকির গুলি করে। বিনা চিকিৎসায় তাইম সেখানেই মারা যান।
এদিকে, গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যা মামলায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মো. আকরাম হোসেন গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি কোনাবাড়ী এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন।
পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে মো. হৃদয় বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য কোনাবাড়ী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তাকে পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।