১৯৮৬ সালে শাফাত আহমেদ-এর নেতৃত্বে কুয়েতে বসে ডেল্টালাইফের প্রায় ২০ জন উদ্যোক্তা পরিচালক এর মাধ্যমে ডেল্টালাইফের প্রতিষ্ঠা হয়। কোম্পানীটির অধিকাংশ পরিচালক প্রবাসী ছিলেন। শাফাত চৌধুরীর পরিচালনায় কোম্পানীটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বৃহত্তম লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আইপিওতে ডেল্টার শেয়ারের জন্য প্রায় ৪০ গুণ ক্রেতার দরখাস্ত জমা পড়ে, যা লটারীর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
শাফাত চৌধুরী গুলশানের ২ নং সার্কেলে ২২ কাঠার একটি কমার্শিয়াল প্লট কিনেছিলেন। ড. সৈয়দ মোকাররম আলীর পর মঞ্জুরুর রহমানকে চেয়ারম্যান করা হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে মঞ্জুরুর রহমান এইই-কে ডেল্টার ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন এবং বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ৬ কোটি টাকা অগ্রীম প্রদান করেন। ওই টাকা দিয়ে মঞ্জুরুর রহমান বিশাল পরিমাণ ডেল্টার পাবলিক শেয়ার কিনে নেন।
২০০৫ সালে বেশিরভাগ বোর্ড সদস্য তাকে সরিয়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন-কে চেয়ারম্যান করেন। তখন ১০০ টাকার শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১৮০০ টাকা এবং লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে মঞ্জুরুর রহমান চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তার সময় ১০০ টাকার শেয়ারের দাম ৬৩ হাজার টাকা এবং লাইফ ফান্ড দাঁড়ায় ২৬০০ কোটি টাকা।
২০১২ সালের আগে সরকার কর্তৃক নিম্নোক্ত আইনি পরিবর্তন হয়:
১. বীমা আইন ২০১০-এর ৭৫ ধারায় ব্যাংকের পরিচালক থাকলে স্থায়ীভাবে বীমা কোম্পানির পরিচালক হওয়া যাবে না।
২. সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ২ সিসি-ধারায় পাবলিক কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ২% এর নিচে থাকলে পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না।
৩. বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ারধারণ বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধি ৩ ও ৪ অনুযায়ী কোনো পরিবার এককভাবে ১০% এর বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।
৪. ইনসুরেন্স কোম্পানিতে ৬০% উদ্যোক্তা পরিচালক, ৩০% পাবলিক পরিচালক, এবং ১০% ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালক থাকতে হবে।
৫. একই পরিবারে দুইজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না এবং কোনো পরিচালকের আত্মীয় এমডি পদে থাকতে পারবে না।
এই আইনের ফলে ডেল্টালাইফে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন ও মঞ্জুরুর রহমান ছাড়া অন্য কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক ২% শেয়ার রাখেননি, ফলে অন্য উদ্যোক্তা পরিচালকরা পরিচালক পদ হারান। মঞ্জুরুর রহমান ২ জন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালক এবং ১ জন পলিসি হোল্ডার পরিচালক নিয়ে বোর্ডে ছিলেন।
২০১২ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে পূবালী ব্যাংকে পরিচালক পদে যোগ দেন। এর পর মঞ্জুরুর রহমান ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার পরিবার, including তার স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, ছেলে জিয়াদ রহমান, মেয়ে আদিবা রহমান, আনিকা রহমান, সাইকা রহমান, কে অবৈধভাবে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে শোকার্জি করেন, কোম্পানীর শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে এবং মঞ্জুরুর রহমানের মেয়ে আদিবা রহমান-কে ডেল্টাতে এমডি/সিইও নিযুক্তি দেয়। এর পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বোর্ডকে বাতিল করে বহু মামলা দায়ের করেছে।
মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত মামলা গুলি ছাড়াও আরো অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে:
১. রিট পিটিশন নং ২০৯৩/২০২১
২. রিট পিটিশন নং ৮৭৩৪/২০২০
৩. রিট পিটিশন নং ৯৫৮৯/২০২০
৪. রিট পিটিশন নং ৮৭৫৬/২০২০
৫. রিট পিটিশন নং ৮৭৬৬/২০২০
… (অন্যান্য মামলা)
এসব মামলার মধ্যে, ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানো হয়েছে যে, মঞ্জুরুর রহমান এবং তার পরিবার ৩৬৮৭ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হওয়া সত্ত্বেও সরকারীভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
২০১৩ সালের পর থেকে, ডেল্টা লাইফের আস্থায় ইসকনের সাহায্য নিয়ে মঞ্জুরুর রহমান এবং তার পরিবার চুরি-চামারি ঢাকার জন্য ৫ জন ভারতীয় কম্পিউটার এক্সপার্ট নিয়োগ করেন। তাদের মাসিক মজুরি ছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের অডিটে এটি প্রকাশ পায় যে, মঞ্জুরুর রহমান ও তার পরিবার ৩৬৮৭ কোটি টাকা লুটপাট করেছে এবং এ থেকে ইসকনকে শত শত কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে, ইসকনের হস্তক্ষেপের কারণে মঞ্জুরুর রহমান এবং তার পরিবারকে কোনো সরকারী আদেশে আটকানো সম্ভব হয়নি। ডেল্টা লাইফের ঢাকাস্থ অফিসে প্রায় ৫৫০ কর্মচারীর মধ্যে ২৭৮ জন ইসকনের সক্রিয় সদস্য বলে জানা যায়।
সম্প্রতি, ২০১৩ সালের পর নতুন এমডি হিসেবে জীবন বীমা খাতের শহিদুল ইসলাম-কে নিয়োগ দেয়া হলেও, ইসকনের বাধার কারণে তার নিয়োগ স্থগিত করা হয়।