তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পাহাড়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া এ সিদ্ধান্ত বাতিলে বন এলাকার বাসিন্দারা খুশি। তারা জানান, পার্ক নির্মাণ হলে তাদের বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহে হুমকির মধ্যে পড়তো। এদিকে বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত এ বনভূমিকে আরও উন্নত করতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
২০২৩ইং সালের নভেম্বরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার একনেক সভায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৮ইং সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপরই তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে পড়ে এ সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তের বিস্তৃত পাহাড়-টিলা নিয়ে দেশের অন্যতম সংরক্ষিত বন, লাঠিটিলা। পাহাড়ের বুক জুড়ে ৬০ থেকে ৬৫ বছরে গড়ে উঠা সেগুনবাগান আর জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য আঁধার এ এলাকা। সেই সাথে এ লাঠিটিলা বন ইন্দো-মিয়ানমার জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের অংশ।
এটি হাতি চলাচলের একমাত্র করিডোর হিসেবে দেশে বেশ পরিচিত। শুধু তাই না; ৩৫০টি পরিবারের স্থায়ী বসবাস পাশাপাশি এ পাহাড়ে রয়েছে, প্রায় ২০০ বছরের পুরানো সুমিষ্ট কমলা আর সিলেটি আধা লেবুর বাগান। যা থেকে বছরে কয়েকশো কোটি টাকা আয় হয়। তবে পরিবেশবাদীদের কঠোর আপত্তির পরও বিগত শেখ হাসিনা সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত এ লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়।
এ লাঠিটিলা বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জায়গায় ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে সাফারি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আর ২০২৮ইং সালের সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সফলতার মুখ দেখেনি। এ বনে নানা স্থাপনা, হ্যালিপ্যাড, বিশাল আকৃতির কৃত্রিম লেক ও পাকা সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এতে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানায়। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামের পরও আওয়ামী লীগ সরকার সাফারি পার্ক নির্মাণে দৃঢ় ভূমিকা পালন করে। অবশেষে সংরক্ষিত এ বনে পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে। এতে অত্যন্ত খুশি স্থানীয়রা।
তারা জানান, পার্ক নির্মাণ হলে তাদের বাসস্থান ও জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়তো। কাটা পড়তো বিস্তীর্ণ এলাকার ফলের বাগান। সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় কয়েক যুগ ধরে লাঠিটিলায় বসবাসকারী মোরশেদ মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। সাফারি পার্ক বাতিল করায় তারা এ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনেকে বলেন, তারা পাহাড় রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষারও জোর দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিব প্রসন্ন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতিবাদ জানিয়েও পরিবেশবাদীরা সাফারি পার্ক নির্মাণ আটকাতে পারেনি। আজ এ অন্তবর্তীকালীন সরকার সাফারি পাক নির্মাণ বাতিল করায় তাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
এদিকে এ সংরক্ষিত বনে হাতি-বাঘসহ অন্য বন্যপ্রাণীরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেই রকম উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানালেন মনু রিভার ভয়েসের নির্বাহী প্রধান আ স ম সালেহ সোহেল। জুড়ী লাঠিটিলা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. নাজমুল হুসাইন জানান, স্থানীয় লোকজনের সম্পৃক্ততায় এ বনকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনার কথা ভাবছে এ সরকার। ১৯২০ইং সালে তৎকালীন সরকার লাঠিটিলাকে পাথারিয়া হিল রেঞ্জের আওতায় নিয়ে এটাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা দেয়।