ঢাকা:
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যেখানে ইসকন ধর্মীয় সংগঠনের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে থাকা ইসকনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, এবং প্রায় শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে।
এছাড়া, ডেল্টালাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে মোট ৫৩০ জন কর্মচারী কাজ করছেন, যাদের মধ্যে ২৩৮ জনই হিন্দু এবং ইসকন ধর্মের অনুসারী। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পূর্ববর্তী তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ইসকনের উচ্চপদস্থ নেতা। এমনকি, প্রায় ১০০ জন কর্মচারী, যারা ইসকনের সদস্য ছিলেন, তাদের চাকরি থেকে ছাটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, অভিযোগ রয়েছে যে, ৫ জন বিদেশি নাগরিক, যারা ইসকনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা ভুয়া ভাউচার ব্যবহার করে ২০ কোটি টাকা পাচার করেছেন।
ডেল্টালাইফ ইনস্যুরেন্সের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উত্তম কুমার সাধু, এবং পূর্ববর্তী দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দাস দেব প্রসাদ ও শ্বপন কুমার সরকার, ইসকনের বড় নেতাদের মধ্যে ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে, অভিযোগে আরও বলা হয়েছে যে, ইসকনের নির্দেশে শাহীদুল ইসলামকে ডেল্টালাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার তালিকা:
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রিট পিটিশন নং ২০৯৩/২০২১, ৮৭৩৪/২০২০, ৯৫৮৯/২০২০ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব মামলা দেশের বিভিন্ন বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিচারাধীন রয়েছে এবং সেগুলোর ফলাফল এখনও নির্ধারিত হয়নি।
চট্টগ্রামের জমি দখল ইস্যু:
এছাড়া, চট্টগ্রামের হিন্দু সামাজিক সংগঠন ‘প্রবর্তক সংঘ’ ইসকনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, ইসকন একটি মন্দির তৈরির জন্য ১৮ গন্ডা জমি ইজারা নিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তারা আরও ৩ একর জমি দখল করেছে। এর পরিণতিতে প্রবর্তক সংঘের পুরনো মন্দিরটি ভেঙে ইসকন একটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করেছে এবং সেখানে ব্যবসা শুরু করেছে। এছাড়া, পাহাড়ের একাংশ কেটে একটি আবাসিক ভবন নির্মাণও করা হয়েছে। এই নির্মাণ কাজের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রবর্তক সংঘ আদালতে মামলা করেছে, তবে তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে আদালত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। এর ফলে ইসকনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছে, বিশেষ করে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা বিষয়ে।
শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ:
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির একজন পাবলিক শেয়ারহোল্ডার, মানিক রতন চাকমা, বনানী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, কিছু কর্মকর্তা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পদ দখল করার জন্য অবৈধ কার্যকলাপ চালাচ্ছে এবং কোম্পানির পরিচালনায় দুর্নীতি করছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যক্তি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য জালিয়াতি এবং দালালির মাধ্যমে অবৈধভাবে পদ দখল করেছে।
মানিক রতন চাকমা জানান যে, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং এটি ছিল দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বীমা প্রতিষ্ঠান। তবে তিনি অভিযোগ করেন যে, কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পদ দখল করেছে এবং তারা কোম্পানির পরিচালনায় নিজেদের স্বার্থে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের মধ্যে মানজুরুর রহমান, সুরাইয়া রহমান, আদিবা রহমান, জিয়াদ রহমান, সাইকা রহমান এবং আনিকা রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, মানিক রতন চাকমা অভিযোগ করেছেন যে, এই ব্যক্তিরা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য ২০১২ সালে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কর্তৃক আরোপিত শর্ত ভঙ্গ করে নিজেদেরকে স্পন্সর ডিরেক্টর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই ব্যক্তিরা, যারা আইনগতভাবে স্পন্সর ডিরেক্টর হওয়ার যোগ্য ছিলেন না, তারা কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অংশগ্রহণ করে নিজেদের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক হিসেবে দাবি করেছেন।
এই অভিযোগের তদন্ত সম্প্রতি কিছু চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (IDRA) দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩,৬৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে বনানী থানা অভিযোগটি গ্রহণ করেছে এবং তদন্ত শুরু করবে বলে জানিয়েছে।