নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভূমিহীনদের কবিলত রেজিষ্ট্রিকৃত জায়গায় নির্মিত চালায় শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় দিকে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভূমহীনদের পক্ষে মোঃ আব্দুল হক।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিজয়পুর মৌজায় দুর্লভপুর গ্রামের ১৮ জন ভূমিহীন তাদের নিজস্ব ভূমি না থাকায় উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমি প্রাপ্ত হন। কিন্তু ভুমিহীনরা ভূমি দখল করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাঁধা প্রাপ্ত হয়। এ নিয়ে অনেক দেন দরবার হওয়ার পরও ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি উভয়পক্ষ। গতকাল শনিবারও স্থানীয় মাতাব্বর নিয়ে মীমাংসার স্বার্থে একত্রে বসলেও চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে নি। এ নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাদের কে ঐ জায়গায় অবস্থান করতে দিচ্ছে না বিজয়পুর গ্রামের
ভূমিহীনদের বিজয়পুর গ্রামের – সখী চরণ দাস, রাধাচরণ দাস, হরিচরণ দাস, সুশেল দাস, জুয়েল দাস,সুহেল দাস, খোজলাল দাসেরা।
ভূমিহীন শুক্কুর আলী, আঃ রহিম ও আইয়ুব আলী বলেন, আমরা কয়েক কাটখাল কান্দায় প্রাপ্ত ভূমিতে একমাস আগে একটি টিনের চালা তৈরী কয়েকজন রাতে রাত্রি যাপন করি। হঠাৎ করে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় ঐ চালায় আগুন লাগিয়ে দেন। তাহাহুড়া করে উঠে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি এবং কয়েকজনকে দৌঁড়ে পালাতে দেখি। তার মধ্যে সুশেল দাস,জুয়েল দাস,খুজলাল দাস। ভূমিহীন শুক্কুর আলী আরও জানায় আমরা প্রায় ৮ বছর আগে ঐ কাটখাল কান্দায় ১৮ অস্থায়ী ঘর নির্মান করেছিলাম তখন সখিচরণ দাস, হরিচরণ দাস ও রাধাচরণ দাসের নেতৃত্বে আমাদের ঘরগুলি লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সাকেব মেম্বার মোঃ ফুল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ভূমিহীনদের দেনবার চলে আসছে কিন্তু কোস সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে আদালতে দুইটা মামলার মধ্যে একটি মামলা নিঃষ্পত্তি হলেও আরেকি মামলা চলমান রয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিঃষ্পত্তি দ্রুত না হলে বড় ধরণের ঝামেলা সৃষ্টির শংকা থেকেই যায়।
অভিযুক্ত রাধাচরণ সরকারকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে, কাটখাল কান্দায় সেখানে আমাদের খতিয়ান ও বিআরএস ভূক্ত জায়গা রয়েছে, আমরা জমিতেই অবস্থা করছি। আমরা কারও জায়গায় ও বাঁধা দেইনি। তারা যে ১৮ জন ভূমিহীন রয়েছে তাদেরকে সরকার বিভিন্ন জায়গায় জমি দিয়েছে। সরকার দেও জায়গায় আমাদের কোন আপত্তি নেই। গতরাতে আগুন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি আমরা তিন ভাই-ই বয়োবৃদ্ধ। এতো রাতে আগুন দেওয়ার মত সামর্থ নাই এমনকি আমাদের সন্তানেরা ঐ জায়গায় গিয়ে রাতে আগুন দেয় নাই। এটা হচ্ছে তাদের সাজানো নাটক।
তিনি আরও জানান, কাশিপুরের (পার্শ্ববর্তী) গ্রামের মনসুর বলেছে,তার টিলারের রক্ষিত কররোসিন এনে নিজেরাই আগুন লাগানোর নাটক করছে।
গতকাল (শনিবার) স্থানীয় সালিশে উপস্থিত মাতাব্বর পার্শ্ববর্তী গ্রাম কাশিপুরের মোঃ কাসেম মড়ল বলেন, তাদের সমস্যা গতকালই সমস্যা হয়ে যেত। আমরা যে বোর্ড গঠন করেছিলাম, তাতে সকলের সর্ব্বসম্মতি ক্রমে সিন্ধান্ত হয়েছিল ২৩ দাগে বিআরএসের জায়গা আগে মেপে দিয়ে পরে ভূমিহীনদের জায়গা মেপে বুঝিয়ে দেওয়া হবে কিন্তু দুর্লভপুর গ্রামের আব্দুল হকের উস্কানিতে গতকাল জায়গাটা মাপা হয়নি। আর এরই জেরে নিজেরা তাদের ইচ্ছে পূরণের জন্যই টিলার থেকে কেরোসিন নিয়ে আগুন ধরায় ঐ চালাতে।
আরেক অভিযুক্ত সুখলাল সরকারকে আগুন লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান আমি এর সাথে জড়িত নই। তিনি আরো জানান, গতরাত আমি খালিয়াজুরীতে আরিফ ভাইয়ের কাছেই ছিলাম। তারা মিথ্যা বলছে আগুন আমরা দেইনি। নিজেরা নিজেরা আগুন দিয়ে মিথ্যাচার করছে।
সালিশী বোর্ডের আরেক সদস্য গাজীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ মিয়া, এ নিয়ে তিনবারই দেন দরবারে ছিলাম কিন্তু উভয় পক্ষই বোর্ডের সিন্ধান্ত মানতে নারাজ। প্রত্যেকেই চায় তাদের মন মত মাপতে। এই হল অবস্থা।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় হল আদালতের। এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত স্থান হল আদালত। শুনেছি ভূমিহীন যারা আছে তারা নাকি মামলা করেছে। গতরাতে চালা ঘরে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি শুনেছি আগুন দিয়েছে এমনকি লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। তবে আমার এক উপ-পরিদর্শককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।