প্রতারণা,তথ্য জালিয়াতি এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর বনানী থানায় মানিক রতন চাকমা নামে একজন পাবলিক শেয়ারহোল্ডার এবং ডেল্টা লাইফের বীমা গ্রাহক বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অবৈধভাবে শেয়ার এবং পরিচালক পদ কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের অসাধু কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে
মানিক রতন চাকমা, যিনি ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির একজন শেয়ারহোল্ডার, দাবি করেছেন যে তিনি ১৯৮৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। শুরুর দিকে ২০ জন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। তবে চাকমার অভিযোগডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা মানজুরুর রহমান,সুরাইয়া রহমান,আদিবা রহমান, জিয়াদ রহমান, সাইকা রহমান এবং আনিকা রহমান সহ কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পদে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কোম্পানির পরিচালনা কৌশলকে প্রভাবিত করেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, এসব আসামি, যারা আইনগতভাবে ‘স্পন্সর ডিরেক্টর’ হওয়ার যোগ্য ছিলেন না, তারা বিভিন্ন দালালি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদেরকে স্পন্সর ডিরেক্টর হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তারা কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকে স্বীকৃত শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক হিসেবে দাবি করেন, যদিও তাদের প্রকৃত শেয়ার এবং পরিচালক পদে অধিকার করার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা বিভিন্ন রেজিস্ট্রি ও নথিপত্রে ভুল তথ্য দিয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগের মধ্যে আরও বলা হয়েছে, ২০১২ সালে সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) যখন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে ২% শেয়ার ধারণ করার শর্ত আরোপ করে, তখন মাত্র দুইজন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মানজুরুর রহমান এই শর্ত পূর্ণ করেছিলেন। পরে, মানজুরুর রহমান কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে আসীন হন। অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, এ সময় থেকে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে অবৈধভাবে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেন।
চাকমার অভিযোগ অনুযায়ী, মানজুরুর রহমান কোম্পানির ওপর অবৈধভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন এবং কোম্পানির কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে নিজ কন্ট্রোলে আনেন। এছাড়াও, তিনি জাল তথ্য দিয়ে কোম্পানির বার্ষিক রিপোর্ট এবং অন্যান্য রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করেছেন, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়া হয়েছিল।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সুরাইয়া রহমান,আদিবা রহমান,জিয়াদ রহমান, সাইকা রহমানএবং আনিকা রহমান এসব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত, এবং তারা অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়ে কোম্পানিতে নিজেরদের পরিবারতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে, যার তদন্ত সম্প্রতি বিভিন্ন চার্টার্ড একাউন্টেন্টস এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (IDRA) কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩,৬৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা বিভিন্ন অডিট রিপোর্ট এবং বিশেষ প্রশাসনিক তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা এসব অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানির সম্পদকে অপব্যবহার করেছেন।
এখন পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সরোয়ার বলেন , মানিক রতন চাকমা নামে একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।