মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেছে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব। সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড. রাগীব আলী মিলনায়তনে ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এম. সাইফুর রহমান তালুকদার।সভায় বক্তারা বলেন, দেশী – বিদেশী চক্র আমাদের দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে।তাই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শামীম আহমদ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ কামাল উদ্দিন। শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন আবদুল কাদির জীবন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। আমরা বড় ভাই রেজুয়ান আহমদ রেনু চট্টগ্রামে ইপিআরে থাকাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আমরা তাঁর লাশ পর্যন্ত পাইনি। কিন্তু মধ্যখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল, কারণ ছিল তিনি ডা. শফিকুর রহমানের ভাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তারপরও আমার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার চেষ্টা করা হয়েছে , তারা সফল হয়নি। বিগত দিনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, সর্বাধিনায়ক এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও বিতর্কিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র এক ব্যাক্তি ও একটি পরিবারের কৃতিত্ব দেয়ার জন্য এই জঘন্য কাজ করা হয়েছে। গণহারে সবাইকে রাজাকর ট্যাগ দেয়া হতো। শেষ পর্যন্ত সেই রাজাকার ট্যাগ নিয়েই তাদেরকে পালাতে হয়েছে।তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমাদের জন্য কারাগার ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী।কারাগারে আমাদের সাথে অপমানজনক আচরণ করা হত। ফ্যাসিস্ট চক্র জামায়াত বিএনপিকে নিপীড়নের টার্গেটে পরিণত করেছিল। আমাদের নেতাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, কর্মীদের গুম করে মেরে ফেলা হয়েছে।আমরা ছিলাম ঘর ছাড়া। এভাবে লাখ লাখ পরিবারকে নিজ ঘর থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তিনি গণমাধমের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তার দাবীকে যৌক্তিক আখ্যায়িত করে সংবাদ প্রকাশে বস্তুনিষ্ঠতা,সত্যতা ও পক্ষপাতহীন হতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন কর্ণেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্স সিলেট অঞ্চলকে মুক্ত করেছিল। তাই সিলেটবাসী আজ কৃতজ্ঞচিত্তে শহীদ জিয়াকে স্মরণ করে। জুলাই-আগস্টের গণবিপ্লবের পর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চলছে। রাষ্ট্রের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এখনও প্রশাসনে ফ্যাসিস্টদের দোসর বসে আছে। তারা রাষ্ট্রের কর্যপরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এখনো আমাদের নেতা এম. ইলিয়াস আলী, ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ, আনসার আলী সহ আমাদের গুম হওয়া নেতাকর্মীদের ফিরে পাইনি। গুুম কমিশন সকল গুমের সাথে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তাই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ৯০ ও ২৪ দু’টি গণ অভূথান দেখেছি।নব্বই এর ভূল হলো অভূথান পর পরই অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে স্বৈরাচারকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। ফলে অভূথানের ফলাফলকে ধরে রাখা যায়নি। তাই এবার যেন সেটার পুনরাবৃত্তি না হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তা খেয়াল রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শামীম আহমদ বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সম্মূখ সমরে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।কিন্তু বিগত ১৫ বছর এক ব্যাক্তির কৃতিত্ব দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে আনতে হবে।
আবেগাপ্লুত শামীম আহমদ বলেন, আর যেন দেশে কেউ গুমের শিকার না হয়। কারণ আমরা জানিনা আমাদের পরিবারের সদস্যের পরিণতি কি হয়েছে। গুম পরিবারের সদস্যরা এই কষ্ট বুঝা কঠিন। আমরা গুম হওয়া সকল ব্যাক্তিকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।
সভায় বক্তব্য রাখেন- সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মুহিত দিদার, সহ সভাপতি জহিরুল ইসলাম মিশু, সহ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমদ রনি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ কামাল আহমদ, ক্লাব সদস্য তারেক আহমদ খান, আমির উদ্দিন, ডিএইচ মান্না প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ বলেন,দেশের ৫৪তম আর জুলাই ছাত্র জনতার অভূথান উত্তর প্রথম বিজয় দিবস আজ।বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থান হয়েছে নতুন বাংলাদেশে সেই প্রত্যাশা পূরণে সকলকে কাজ করতে হবে। তিনি রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের দেশ, জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লোকমান হাফিজ, শাহ মাছুম বিল্লাহ ফারুকী, শাহিদ হাতিমী, মাজহারুল ইসলাম সাদি, জসিম উদ্দিন, এম.এ ওয়াহিদ চৌধুরী, মো. আলমগীর আলম, ফাহাদ মারুফ, সৈয়দ রাসেল আহমদ, শিপন চন্দ জয়, আহমেদ পাবেল, মো. সুহেল মিয়া, নাহিদ আহমদ প্রমুখ।