শুভ তংচংগ্যা।
হাজার বছরের পর ১৯৭১ সালে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় নতুন এক স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ মহান বিজয় দিবস ২০২৪। দিবসটির উপলক্ষে রাজধানী সরকারি তিতুমীর কলেজে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও নানারকম আয়োজন করা হয়। সকালে কলেজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এবং শহীদের জন্য কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করেন। পরে সকাল ১০টায় কলেজ অডিটোরিয়ামে ধর্মীয় পাঠের মধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক শিপ্রা রানী মন্ডল, অধ্যক্ষ সরকারি তিতুমীর কলেজ। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার, সম্পাদক শিক্ষক পরিষদ। এসময় প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৪৫ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন অধিকার হতে বঞ্চিত হতে থাকি। তারা আমাদের বাংলা ভাষা কেঁড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তরুণ ছাত্ররা ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য জীবন দিয়ে ফিরিয়ে দেয় আমাদের মায়ের ভাষা। তখন থেকে বাংলার মানুষ স্বাধীনতার জন্য নানা আন্দোলন গড়ে উঠে। সর্বশেষ ১৯৭১ সালে আমরা ৩০ লক্ষ শহীদ ২লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করি। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে সকর শহীদ এবং ২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা। বিশেষ অতিথি হিসেবে ড. মিজানুর রহমান বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতা ৫৩ বছরে আমরা দুইবার আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা লাভ করলেও আসলে আমরা স্বাধীন হয়নি। তাই ২০২৪ সালে জুলাই মাসে আমরা আরেকবার স্বাধীনতা লাভ করি। উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক সাবিনা আজফার, বিজয় দিবস উদযাপন কমিটি। আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে কেমন অনুভূতি তিতুমীরের জেভিয়া চাকমা নামে এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে বার্তাকণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সালে মোট ৫৩ বছরের আমরা দুইবার স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি ৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখি নাই কিন্তু ২৪ স্বাধীনতা আন্দোলন দেখেছি। আমরা যদি ৭১ এর স্বাধীনতার ইতিহাস দেখি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন সর্বজনে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ১৯৭২ থেকেই শুরু হয় সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার ওপর আঘাত। এই কয়েক দশকে বাংলাদেশে সামরিক ও বেসামরিক স্বৈরশাসনই ছিল প্রধান প্রবণতা। এত বছরে আমরা কখনোই স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পাইনি। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র নাম করে এ যাত্রায় সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল শেখ হাসিনা ও তাঁর দলবলের শাসন। ২৪-এর গণ- অভ্যুত্থান সেই ‘ মানবাধিকার সহ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আবার সামনে এনেছে। কিন্তু আমরা গত চার মাসে এখনো সেটি দেখতে পায়নি। গত ১৮,১৯,২০ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে আদিবাসীদের হত্যা করা হলো ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হলো সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি দেখতে পায়নি। তাহলে কিভাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা হলো? বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদিও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু আমরা কমিটিতে দেখলাম নারী প্রতিনিধি, আদিবাসী প্রতিনিধি, রাখা হয়নি। তাহলে কিভাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হলো? তারপরও আমরা সকল শিক্ষার্থীরা আশা রাখি বাংলাদেশে সকল মানুষ নিজেদের অধিকার পাবে একটি গণতান্ত্রিক একটি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।