গলায় সিমেন্টের বস্তা বেধে জীবিত নিক্ষেপ করা হয়েছিলো কুমার নদে। চিকিৎসা পেশায় তার কাল হয়েছিলো। ১৯৭১ এ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন তিনি। সাহিত্যে দুর্বলতা ছিলো প্রতিনিয়ত সাহিত্যের আসর বসতো তার বাড়িতে। লেখালেখি করতেন। একাত্তরের ২৮ অক্টোবর হঠাত একদল রাজাকার তার বাড়িটি ঘিড়ে ফেলে তাকে তুলে নিয়ে যায়। নরপশুর দল ডা: মনোরঞ্জনকে গলায় সিমেন্টের বস্তা এবং পায়ে ইট বেধে শৈলকুপার কুমার ব্রীজের উপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়।ডা: মনোরঞ্জন জোয়াদ্দারের জন্ম ১৯০৭ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা সদর সরকার পাড়ায়। তিনি ছিলেন ব্রজোমহন জোয়াদ্দারের একমাত্র সন্তান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাশ করে চলে যান কলকাতায় চিকিৎসক হওয়ার জন্য। পরবর্তীতে চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসেন নিজ জন্ম ভিটায়, শৈলকুপার সাহা ফার্মেসিতে শুরু করেন রোগী দেখা।
ডা: মনোরঞ্জন জোয়াদ্দারের ছয় মেয়ে। জীবিত আছেন ছোটমেয়ে পুস্পা রানী জোয়াদ্দার স্বামী মনোজ কুমার সরকারের সংগে কুস্টিয়া সদর হরিনারায়নপুর বসবাস করেন। মনোরঞ্জন জোয়াদ্দারের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত রয়েছে বাংলা একাডেমীর “শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ” গ্রন্থে।পুস্প রানী জানান তার তিন বোন আগেই ভারতে চলে যান এবং সেখানেই তাদের বিয়ে হয়।তার মা যুদ্ধের আগেই মারা যান। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে তার বাকি তিন বোনও ভারতে চলে যান। বাবা এখানে রয়ে যান এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতে থাকেন।
পুস্পারানীর স্বামী মনোজ কুমার জানান তার শশুরের চিকিৎসায় অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়েছেন। এ কারনে রাজাকারেরা তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরে তার শশুর যখন খেতে বসেছেন এমন সময় রাজাকারের তার বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে লোকমুখে শুনতে পেরেছি তাকে গলায় সিমেন্টের বস্তা বেধে পায়ে ইট বেধে জীবন্ত কবিরপুর ব্রীজের উপর থেকে কুমার নদে ফেলে দেওয়া হয়। তার লাসটাও আর পাওয়া যায়নি।
পুস্পা রানী স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে দেখেন তার জমিজমা অনেকেই দখল করে নিয়েছে। ভিটেবাড়িটিও বেহাল অবস্থা। বাকি যা ছিলো সবকিছু বিক্রি করে এখন কুস্টিয়ায় বসবাস করেন। পুস্পারানীর আক্ষেপ যে মানুষটি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে প্রান বিসর্জন দিলেন কিন্তু সরকারী ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সীকৃতিটুকুও পেলেন না।