নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার নৈহাটি বাজারের ব্যবসায়ী নওয়াব আলীর দোকানে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা ও লুটপাট হয়েছে। হামলাকারীরা দোকানের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে করে হয়রানি। এমন আরও অনেক ব্যবসায়ীর দোকানে লুটপাট হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে অনেককে।
তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও অনেক দোসর বিএনপি সেজে তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার দোকানেও হামলা লুটপাট হয় একই কায়দায়। ৪-৫ লাখ টাকার মালামাল লুটের পরে দেওয়া হয় মামলা। গত তিন বছর ধরে তিনি ঢাকায় পালিয়ে ছিলেন। এখন ঢাকাতেই বসবাস করেন।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মিয়া। হোটেল দোকান ছিল তার। হামলা চালিয়ে লুটপাট করে হোটেলে থাকা টিভিসহ ৪ লাখ টাকার মাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। প্রানের ভয়ে তিন বছর ছিলেন পলাতক। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চলতি মাসে এলাকায় ফিরে এসে নতুন করে দোকান সাজাচ্ছেন তিনি।
দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ফের নতুন করে দোকান খুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।
বাজারের এমন আরও ৭-৮ জন ব্যবসায়ীর দোকানে গত তিন বছর আগে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম, তার ভাই আল আমিন, তাদের সহযোগী ডালিম মিয়ার নেতৃত্বে এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে তুলে এসব হামলা চালানো হয়েছিল। সরকার পতনের পর আমিরুল ও আল আমিন গ্রেপ্তার হলেও ডালিম নিজেকে বিএনপি সেজে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি বিএনপি নেতা পরিচয়ে তাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ডালিম।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে এই বাজার আতংকের বাজার ছিল। হামলা করে সব লুটে নিয়ে যায়। জানের ভয়ে এলাকা ছাড়া ছিলাম। কয়দি হলো এলাকায় এসে ফের দোকান সাজাচ্ছি। তবে এখনো শান্তিতে নেই আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে গেলেও তাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে। এখনো হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, আমিরুল, আল আমিন ও ডালিমের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং আমার দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে ৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। তারপর থেকে তিন বছর ধরে এলাকা ছাড়া আছি। সরকার পতনের পর অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা পলাতক থাকলেও হামলাকারীদের একজন ডালিম এখন বিএনপি সেজে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
নৈহাটি গ্রামের তামিম হাসান হিমেল বলেন, আওয়ামী লীগ সময়ে আমিরুল ও আলামিনের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং এর লিডার ডালিম ও তার সহযোগীরা বাজারে লুটপাট, মারামারি ও মাদক ব্যবসায় যুক্ত ছিল। বিএনপি সমর্থক ও নেতাকর্মীদের এলাকায় আসতে দিত না।
ভুক্তভোগী ছোটন শেখ জানায়, তাদের ভয়ে তিন বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর এলাকায় আসতে পারিনি লাশ দেখতে।
স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার হোসেন ভুট্টু বলেন, কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছিল। সম্প্রতি একটা সালিশের মাধ্যমে গণ্যমান্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
অভিযুক্ত ডালিম মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে সব মিথ্যা। মানিক নামের ওই লোক এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কাজ করে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং তৈরি করেছে। আমার বাড়িতে হামলা করে ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এ ঘটনায় আমি আদালতে মামলা করেছি।